দেশের তথ্য ডেস্ক।।
ভারত থেকে নেমে আসা পানিকে সিলেটের সর্বনাশ হয়ে গেছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা থেকে সামান্য (১ সে.মি.) নিচে নেমেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ১০.৮০ থেকে ১ সে.মি. কমে ১০.৭৯ নিচে নেমে এসেছে। টানাবৃষ্টি না হলে পানি আরও কমবে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে গতকাল রাতে আবারও পানি বেড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকছে।
এদিকে, সিলেট নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে বিভিন্নভাবে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় জরুরি সভা করে নানাভাবে কর্মতৎপর রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরানসহ কর্মকর্তারা। আশ্রয়কেন্দ্র চালু এবং বানবাসীদের জন্য খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে নগর ভবন। নগরীর বন্যাকবলিত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেনÑ ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ কর্মকর্তারা।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা হওয়ার পর থেকে সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় নানাভাবে কর্মতৎপরতা চালানো হয়। ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানসহ কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকায় পরিদর্শন করেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর ছিলেন।
তিনি আরও জানান, বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বেশির ভাগ এলাকার। এ ছাড়া বন্যার ঝুঁকিতে আছে এমন সব ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে তাদের ওই আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। সুরমা তীরবর্তী বিদ্যুৎ সাবস্টেশনগুলো রক্ষার জন্য বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়ছে। ২৫ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর তাকবিরুল ইসলাম পিন্টু ও রায়হান আহমদের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী একটি পাঁচতলা খালি ভবনে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার একটি চিকিৎসক দল সেখানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। এ ছাড়াও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই দুটি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত ওয়ার্ডগুলোতে শুকনা খাবার, চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওর স্যালাইন ও কিছু কিছু ওয়ার্ডে মোমবাতি সরবরাহ করা হয়েছে। শনিবার বিকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে।
সাজলু লস্কর জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর ও আমাদের নিজস্ব তথ্য মতে আনুমানিক চার হাজার পরিবার বন্যাকবলিত আছে। রোববারও আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার আমাদের মধ্যে মজুত আছে।
এদিকে, গত তিন দিন ধরে প্লাবিত থাকার পর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি মানুষের। সিলেটের বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট উপজেলায় উঁচু স্থানগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। পানি যত কমছে, ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ততই ভেসে উঠছে। ভেঙে গেছে সড়ক, ভেসে গেছে মাছের ঘের। গোয়াইনঘাটের নয়াগাঙ্গের পাড় এলাকায় চারটি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে গেছে।
রোববার সকালে গোয়াইনঘাটের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ। তিনি জানান, রাস্তাঘাটের চলাচল স্বাভাবিক করতে দ্রুত মেরামত করা হবে। এসব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে।
উপজেলার বেশ ক’টি ইউনিয়নে বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। পানি কমলেও মানুষের ভোগান্তি যেন বেড়েই চলছে। রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে। সড়কের রাস্তা, কালভার্ট ও ব্রিজের ক্ষয়ক্ষতির করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক জায়গার রাস্তাঘাটে কাঁদাজলে একাকার হয়ে যান চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোট এক হাজার ৬৬০ হেক্টর আবাদি জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ৩৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত মোট পরিবার ৪২ হাজার ৯০০, মোট বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০।