দেশের তথ্য ডেস্ক।।
পদ্মা সেতুর পরিত্যাক্ত ওয়ার্কশপ এলাকা, এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এ এলাকা থেকে দিনে রাতে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে কামিয়ে নিচ্ছে একটি ভূমি দস্যু সিন্ডিকেট। এ চক্রের মূল হোতা রোপন বাবু নামে একজন দোভাষী। তিনি চীনাদের সঙ্গে জোগসাজস করে স্থানীয় বালু দস্যুদের সহায়তায় মাটি কেটে বিক্রি করছেন।
এতে মাওয়ায় কাছে কুমারভোগের এ ওয়ার্কশপ এলাকায় এবারের বর্ষায় নদী ভাঙার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বাঁধা দিলে তাদের চাঁদাবাজ বলে ভয় দেখাচ্ছেন রোপন বাবু ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন বলে অভিযোগ তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিমুলিয়া ঘাটের পশ্চিমে কুমারভোগে এলাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সরকার একরে একরে জমি অধিগ্রহণ করে। সেখানে গড়ে তোলা হয় একটি ওয়ার্কশপ।
ওয়ার্কশপে চীন থেকে আমদানিকৃত পদ্মা সেতুর বিভিন্ন মালামাল রাখাসহ সেতুর স্প্যানগুলো জোড়াতালি দেওয়া হতো। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর সেতু কর্তৃপক্ষ এখান থেকে সকল ধরণের স্থানপনা টেন্ডারে বিক্রি করে দেয়। এমনকি ভেতরের রাস্তা ঘাটের ইট-বালুও বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সেখানে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে।
এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে চীনা কর্মীসহ সেতু কর্তৃপক্ষের লোকজনও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কিছু ঠিকাদারকে সেখানে স্থাপনা করতে মাটি ভরাটের বা উচু ভিটি তৈরী করার অনুমোদন দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। তাদের তোলা সেই মাটি এখন আবার কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে সেতু কর্তৃপক্ষের এ দাবির কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সরজমিনের ওই ওয়ার্কশপ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে ভ্যেকু মেশিন দিয়ে বালু কেটে তারা ডাম্প ট্রাকে করে বিক্রি করছে।
এতে উচু জায়গা গুলোতে পুকুর বা গর্ত করে ফেলা হচ্ছে। প্রতি রাতে এখান থেকে ট্রাকে ট্রাকে বালু পাচার হচ্ছে। গত দুই মাস ধরে এ কাজ করে চলছেন চীনা ভায়ায় কথা বলতে পারা রোপন বাবু। তার সঙ্গে চীনাদের ভাল সম্পর্ক থাকায় তারা জোগসাজস করে এ বালু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে বালু কাটার ফলে স্থানীয়দের মাঝে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন এভাবে বালু কাটলে বর্ষায় এ এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। তারা জানান, সেতুর কাজ চলাকালে একসময় এ এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে পদ্মা সেতুর মালামালসহ বিশাল এলাকা নদী গর্ভে চলে যায়। আর এখন এখানে কিছুই নেই, নির্বিচারে বালু কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাই যে কোনো সময় এখানে নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। আর ভাঙন দেখা দিলে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
স্থানীয় মো. ইয়াছিন বলেন, ‘এক শ্রেণির ভূমিদস্যু এখন থেকে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যেভাবে কাটছে তাতে আমাদের ঘরবাড়ি পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়বে। আমরা তাতে বাঁধা দিলে আমাদেরকে চাঁদাবাজ বলে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। গত বুধবার রাতে এখান থেকে ড্রাম্প ট্রাকে করে বালু কেটে নেওয়ার সময় স্থনীয়দের বাঁধার মুখে দুটি ড্রাম্প ট্রাক ফিরিয়ে নেয় তারা। যদি তারা বৈধভাবেই বালু কাটবে তবে তারা কেন ট্রাক ফিরিয়ে নিল?’ এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই রোপন বাবু এখানে বালু কেটে বিক্রি করছে। তার সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সখ্যতা থাকায় তিনি এখান থেকে লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সরকার বা সেতু কর্তৃপক্ষ এখান থেকে চারটি টাকাও পাচ্ছে না। যেভাবে বালু কাটা হচ্ছে তাতে এ বর্ষায় এ এলাকায় পদ্মা নদী ভাঙনের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। আমরা বাঁধা দিতে গেলে আমাদেরকে চাঁদাবাজ বলে ভয় দেখায়। অথচ শুনেছি এই পরিত্যাক্ত ওয়ার্কশপ এলাকাটিতে সরকার একটি সুন্দর পর্যটক কেন্দ্র গড়ে তুলবে। কিন্তু ভূমি দস্যুরা যেভাবে বালু কেটে গর্ত করছে তাতে এখানে পর্যটন কেন্দ্র নয় বরং আবার নদী করার পায়তারা চলছে।’
এ ব্যাপারে রোপন বাবুর কাছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বৈধভাবে এখানে থেকে মাটি কাটছি। আমি মাটি কাটার কন্ট্রাক্ট নিয়েছি।’ আপনি এখানে কোন পদে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামান্য কিছু করে খাই এখানে। স্থানীয় বিএনপি পন্থী একটি চক্র আমার কাছে দীর্ঘ দিন ধরে চাঁদা দাবী করে আসছে। আমি চাঁদা না দেওয়ায় তারা আমার কাজে বাধা দিচ্ছে।’ চাঁদা চাওয়ার ব্যাপারে তিনি কোনো জিডি করেছেন কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ, এএসপি, এসপিসহ সকলেই বিষয়টি জানেন।’
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘ওয়ার্কশপ এলাকার কোনো বালু বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি বা কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা নয়। তবে উচু-নিচু থাকলে সেগুলো ড্রেসিং করে ঠিক করে দেওয়ার কথা। এ বিষয়টি নিয়ে আমি পদ্মা সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির (এমবিসি) সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।‘
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, ‘পরিত্যাক্ত ওই ওয়ার্কশপ এলাকায় কিছু সংখ্যক ঠিকাদার তাদের নিজ খরচে কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে। সে সময় তারা কিছু বালু মাটি ফেলে কাজের সুবিধার্থে উচু ঢিবি তৈরী করে। সেসব কিছু উচু জায়গায়র মাটি ঠিকাদারদের সরিয়ে নিতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কেও যদি সেখানে গর্ত করে বালু বিক্রির মত ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে বিষয়টি আমরা আবশ্যই দেখব।’
এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এ ব্যপারে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি সরকার ও সেতু কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। আমি পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক। কাজ শেষে আমরা এটি সেতু কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিব। এখানে তারা কি করবে সেটি তাদের ব্যাপার।’