অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ জেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষের জন্য জরুরী প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা এবং ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ২৯মে, বুধবার রাতে গণস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ নাজিমুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলা, বাগেরহাটের মংলা ও রামপাল, ভোলার চরফ্যাশন, বরগুনার আমতলি, পটুয়াখালীর খেপুপাড়া সহ রেমালে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন এলাকায় জরুরী স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ত্রাণ, ভেটেরিনারিয়ান স্বেচ্ছাসেবক দল অ্যাম্বুলেন্স, ঔষধ, স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি ও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যায় গণস্বাস্থ্য জরুরী ত্রাণ সহায়তা ও মেডিকেল টিম। সরেজমিনে দেখা যায়, এ ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবন ও কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেঁষা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা কয়রার দশহালিয়া গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দেন মেডিকেল টিমের রেজিস্টার্ড ডাক্তারগণ। গণস্বাস্থ্যের জরিপে দেখা যায়, এখানে একশতাধিক পরিবার বাড়িঘর, জায়গা হারিয়ে ছিন্নমূল অবস্থায় রয়েছে। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী কয়রা উপজেলায় ভেসে গেছে প্রায় ৫ শতাধিক হাঁস মুরগী। দুইশত একর চারণভূমি ও মাছের ঘেরসহ প্রায় ৬ হাজার পুকুর প্লাবিত হয়েছে। ফ্রি চিকিৎসা পেয়ে ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানিয়ে আজগর বিশ্বাস নামে একজন বয়োবৃদ্ধ জানান, “আমার সামর্থ ছিলো না হাসপাতালে যেয়ে চিকিতসে করাবো, ঝড় আর বন্যা লুনা পানিতে চুলকানিতে আমার সারা শরীর ভরে গেছে। ডাক্তাররা আমার ফ্রি’তে দেখলো, ওষুধ দিলো আমরা গ্রামের সবাই খুশি। গণস্বাস্থ্য এর সবার জন্য দুয়া করি।” গণস্বাস্থ্য এর দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ক ডাঃ মাহবুব জুবায়ের সোহাগ বলেন, এখানে অনেকেই ত্রাণ নিয়ে আসছে কিন্তু আমরাই প্রথম বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ কর্মসূচি নিয়ে এসেছি দূর্যোগ কবলিত মানুষদের জন্য। তাদের মধ্যে দেখা গেছে অধিকাংশই শারীরিকভাবে দূর্বল, এলার্জিতে জ্বর সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত ও শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। এছাড়া আগামীকাল থেকে আমাদের ত্রাণ বিতরণ হবে। এসময় মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন, কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম তারিক উজ জামান এবং উপজেলা প্রকল্প অফিসার মামুনুর রশীদ।
এছাড়া গণস্বাস্থ্য এর কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অর্থ বিভাগের উপপরিচালক শেখ কবীর, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ হাসানুর রহমান, মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও জিকের বারোবাড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক জুয়েল রানা নজরুল সহ তিনজন ডাক্তার, ইন্টার্নী এমবিবিএস ডাক্তার ও ভেটেরিনারিয়ান সহ স্বাস্থ্যকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ। উল্লেখ্য, ২৬ ও ২৭ মে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড় রেমালে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা এবং বরগুনা সহ বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। অনেকেই নিজের শেষ সম্বল ও মাথা গোঁজার ঠাইটুকু হারিয়ে ফেলে। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষের অনেকেই কর্মহীন হয়ে অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের পাশাপাশি দূর্গত মানুষের মাঝে চিড়া, গুড়, স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার পাশাপাশি জনমানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।