এমপি আনার হত্যা : আলোচিত কসাই জিহাদের বাড়িতে

17-13.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত নাম কসাই জিহাদ। কসাই জিহাদের বিরুদ্ধে ভারতের কলকাতায় চিকিৎসা নিতে যাওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগে ২৩ মে রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি তাকে গ্রেফতার করে। জিহাদ ভারতের দিল্লিতে অবৈধভাবে বসবাস করতেন। এবং সেখানকার একটি মাংসের দোকানে কসাইয়ের কাজ করতেন।েএমপি আনার খুনের পর লাশ টুকরো টুকরো করার জন্য তাকে ৫ হাজার টাকার ভাড়া করার কথা বলছে পুলিশ।

এদিকে ভারতের গণমাধ্যম জিহাদকে কসাই হিসেবে আখ্যায়িত করলেও জিহাদের স্ত্রী, পিতা- মাতা কিংবা তার প্রতিবেশী কেউই জানেন না জিহাদ কসাই। ২৫ মে পড়ন্ত বিকালে জিহাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে সুনশান নীরবতা। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর বিমর্ষ চেহারায় ঘরের ভিতর থেকে আড়াই বছরের শিশু ইয়ানকে কোলে করে বের হলেন জিহাদের স্ত্রী মুন্নী বেগম। প্রথমে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।

পরে বললেন, গত দুইদিন থেকে বাড়িতে অনেক সাংবাদিক আসছে। আমাদের কথা বলার মতো কি অবস্থা আছে? বাচ্চাটা ভয় পাচ্ছে। জিহাদের খারাপ সংবাদ শুনে শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শশুর বাড়িতে নেই। নামাজে গেছে। এরপর বললেন, জিহাদতো ভালো ছিলো। বাড়ি থাকতে এরকম কিছু করতো না। এক দেড় বছর হলো সে বাড়িতে নেই। তার নামে মোস্তাক গাজীর মামলায় ওয়ারেন্ট হইছিলো। পরে জামিনও হইছিলো। জামিনে আসার পর একদিন হঠাৎ করে ডিবি পুলিশ বাসায় আসছে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কোন কারনে আইছেন। তারা বললো মোস্তাক গাজীর মামলায় ওয়ারেন্ট হইছে এই কারণে আইছি। আমি বললাম, মোস্তাক গাজীর মামলায় ওর তো জামিন হইছে। তখন ডিবি পুলিশ বলছে ওর সাথে একটু দরকার আছে। এরপর আশেপাশের ২/১ জনকে ধরছে, কোন মামলায় তা জানি না। এরপর থেকে হঠাৎ করে জিহাদ বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আর বাড়িতে আসে না। সর্বশেষ ৯ মাস আগে আমার কাছে ফোন করে জিজ্ঞেস করে ছেলে কেমন আছে। দেড় বছর ধরে সে আমাদের কোন খরচও দেয় না। শশুর- শাশুড়ি আর আমি এক বাড়িতে থাকি।

প্রতিবেশী দিনমজুর বাবুল শিকদার জিহাদ সম্পর্কে বলেন, “ভালো ছেলে ছিলো। বাড়ি থেকে অনেক আগে চলে গেছে। শুনেছি ওর নামে ঢাকায় একটা ডাকাতি মামলা ছিলো। মানুষের পাল্লায় পড়ে আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে গেছে”।

প্রতিবেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইমলাক মুন্সি বলেন, “এলাকায় ভালো ছেলে ছিলো। ওরা ৪ ভাই ১ বোন। ভাই সবাই খুব ভালো। এক ভাই জুয়েল সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আরেক ভাই আব্দুল কালাম মাওলানা। মাদ্রাসা করেছেন সেখানে ছাত্রদের পড়াশোনা করান। মসজিদের ইমাম। আরেক ভাই জায়েদ এলাকায় রংমিস্ত্রির কাজ করেন। জিহাদও এক সময় এলাকায় রং মিস্ত্রির কাজ করতো। বয়স বেশি হয়নি ২২/২৩ হবে। ছোটবেলায় ফুলবাড়ীগেট আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। এরপর বারাকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হয়।

এলাকায় আনছার শেখ আর জাকির গাজীর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এরপর জাকির গাজীর চাচাতো ভাই মুস্তাক গাজীকে পেটানোর মামলায় কিছুদিন জেল খাটার পর জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর থেকে থেকে সে আস্তে আস্তে উশৃঙ্খল হতে থাকে। ওর বাবা-মা খুবই পরহেজগার। ওর বাবা জয়নাল হাওলাদার ৩৫/৪০ বছর আগে বরিশাল থেকে এসে আমাদের এলাকায় জায়গা কিনে বসবাস শুরু করে”।

জিহাদের প্রতিবেশী এবং বাল্যবন্ধু সোহেল বলেন, “ওর বিষয়টা আমরা জানি একসাথে বসবাস করি এক পাড়ায় বাড়ি। আমার ঘরের পাশে। খুবই ভালো ছিলো। আমরা একসাথে চলাফেরা করেছি। ছেলেপেলের সাথে রং মিস্ত্রির কাজ করতো। একটা গ্যাঞ্জাম হইছিলো চেয়ারম্যানের সাথে। ওই মামলায় সে জেল খাটছে। জেল থেকে আসার পর তার নামে ঢাকায় একটি ডাকাতি মামলা হইছিলো। শিরোমণিতে তার নামে একটি মামলা হইছিলো। তারপর থেকে সে নিরুদ্দেশ। আমার জানামতে তার নামে ৪টি মামলা আছে। এখান থেকে নিরুদ্দেশে হয়ে সে কোথায় গিছিলো জানিনা । ইন্ডিয়ায় গিছিলো নাকি কোথায় গিছিলো জানিনা। এখন আমরা টিভিতে দেখলাম সে নাকি এখন ওখানে যেয়ে কসাই হইছে। গরু কাটা কসাইয়ের কাজ করতে করতে সে নাকি মানুষ কুচোই ফেলিছে”।

দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ বাবুল আক্তার বলেন, আলোচিত জিহাদ সম্পর্কে আমাদের কাছে খুব বেশি তথ্য নেই। মিডিয়ায় যা দেখছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথ্য চাইলে ওর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে জানাবো। দিঘলিয়া থানায় ওর নামে একটি অস্ত্র মামলা সহ আরো দুইটি মামলা রয়েছে। অন্য কোন থানায় তার নামে কোন মামলা আছে কিনা আমার জানা নেই।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে জিহাদের বয়স যখন ১৬ কি ১৭ বছর তখন সে প্রেম করে বিয়ে করে লাখোয়াটী গ্রামের জাকারিয়া শেখের কন্যা মুন্নীকে। এরপর লাখোয়াটী গ্রামের আলোচিত ব্যক্তি শেখ আনছার আলী সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে থেকে তৎকালীন বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনের সাথে লাখোয়াটী গ্রামের শেখ আনছার আলীর বিরোধ মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাদের দু’জনের বিরোধে এলাকার মানুষ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০২২ সালের ২ আগস্ট সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন। এর ৯ মাস পর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন তার প্রতিপক্ষ শেখ আনছার আলী।

জিহাদ শেখ আনছার আলীর সহযোগী হিসেবে প্রতিপক্ষের উপর হামলায় সাহসী ভূমিকা রাখে। ২০২০ সালের ২৪ মে চেয়ারম্যান জাকির গাজীর চাচাতো ভাই মোস্তাক গাজীকে পিটিয়ে পঙ্গু করা মামলায় জিহাদকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আসার পর থেকে তার বেপরোয়া জীবনের শুরু। দিঘলিয়া থানায় অস্ত্র মামলাসহ তার নামে আরও দুইটি মামলা রুজু হয়। ঢাকায় একটি ডাকাতি মামলা এবং শিরোমণি একটা ঘটনায় খানজাহানআলী থানায় তার নামে একটা মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

জিহাদের প্রতিবেশী কেউ কেউ জানিয়েছেন, ভারতের নিরুদ্দেশ হওয়ার পূর্বে জিহাদের ফুলতলায় যাতায়াত ছিলো। সেই সূত্র ধরে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক কিংবা পরিচয় থাকতেও পারে।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিহাদ জড়িত এমন সংবাদে এলাকার মানুষ হতবাক হয়েছে। দোষী হলে এলাকার মানুষ তার শাস্তিও দাবি করেছেন।

Share this post

PinIt
scroll to top