দেশের তথ্য ডেস্ক।।
উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের পর সারা দেশের ন্যায় ফুলতলা উপজেলায়ও এ পর্যন্ত ৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে চমক দেখিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আকরাম হোসেন। গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত মোঃ সাব্বির হোসেন রানার চেয়ে ৫ হাজার ৭৪৪ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছেন ফারজানা ফেরদৌস নিশা। তিনি তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী রেক্সোনা আজমের চেয়ে মাত্র ৮৫৬ বেশি ভোটের বিজয়ী হয়েছেন ।
আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ ইকবাল হোসেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৯ হাজার ১০২ ভোট বেশি পেয়ে ২য় বারের মতো নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ইকবাল হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই এলাকার নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে যেতে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছিল বিএনপি। ভোট বর্জনের লিফলেটও বিতরণ করা হয়। তারপরও তিনি রেকর্ড ২৩ হাজার ১৩৭ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে খুলনার ৩ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার এটিএম শামীম মাহমুদ স্বাক্ষরিত বেসরকারি ফলাফল থেকে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে শেখ আকরাম হোসেন আনারস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২১ হাজার ৮২৮। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিস্কৃত মোঃ সাব্বির হোসেন রানা ঘোড়া প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৬ হাজার ৮৪। প্রথমবারের মতো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম সরদার শাহাবুদ্দিন জিপ্পীর সহধর্মিনী বিলকিস আক্তার ধারা মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১২ হাজার ৪২০।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী শেখ ইকবাল হোসেনের তালা প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট ২৩ হাজার ১৩৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কে এম জিয়া হাসান তুহিন উড়োজাহাজ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৩৫। প্রথমবারের মতো ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপরপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু তাহের রিপন মাইক প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১২ হাজার ১০৫।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজয়ী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফারজানা ফেরদৌস নিশার কলস প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট ২৪ হাজার ৬৬২। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী রেক্সোনা আজম ফুটবল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৩ হাজার ৮০৬।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আকরাম হোসেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগে বিরোধ দৃশ্যমান হয় । দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঐ নির্বাচনে শেখ আকরাম হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান ভুমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সাথে নির্বাচনী লড়াইয়ে হেরে যান। এরপর থেকে ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগে নারায়ণ চন্দ্র চন্দের অনুসারীরা শেখ আকরাম হোসেনকে কোণঠাসা করতে শুরু করে। যা সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। নির্বাচনে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা শেখ আকরাম হোসেনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো। আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন এবং ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। কারণ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি’র সমর্থক একজন প্রার্থী অংশ নেওয়ায় বিএনপির জামায়াতের ভোট খুব একটা বেশি তিনি পাননি। শেখ আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত নাম। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ফুলতলা উপজেলার শিরোমনি এলাকাতে। ১৯৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮১ সালে জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। নিজের দূরদর্শিতা এবং যোগ্যতায় ফুলতলাসহ খুলনার জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারকদের অন্যতম একজন হয়ে ওঠেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যোগদান করেন আওয়ামী লীগে। যোগদান করার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দলের ভেতর তিনি তার অবস্থান পোক্ত করেন। এরপর বাগিয়ে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। ফুলতলা উপজেলা পরিষদের এ পর্যন্ত ৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে তিনি ৫ বারই তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলা প্রবর্তনের পর ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় পার্টি মনোনীত ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি একই পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি নেতা মোঃ আলাউদ্দিন মিঠুর কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি হতে চেষ্টা চালিয়েছেন। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার প্রত্যাশায়। ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কাছে ১৯ হাজার ভোটের ব্যবধান হেরে যান। নির্বাচনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পেয়েছিলেন ১ লাখ ১২ হাজার ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ভোট।