রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় কি ইসরায়েল জড়িত?

iran-accident-helicopter-20240520152726.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

 

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ইরানের কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম রাইসি। দুর্ঘটনায় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ এই নেতা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম।

১৯৮৮ সালে ইরানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও পরবর্তীতে দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। তার নেতৃত্বেই ইরানের সামরিক বাহিনী কিছুদিন আগে আঞ্চলিক চিরবৈরী ইসরায়েলের ভূখণ্ডে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

রোববার ইরানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় এক পার্বত্য অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্ঘটনা ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে ইরানজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই ঘটনায় অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ছেয়ে গেছে ইরান; যার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু কেবল ইরানের অভ্যন্তরে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সূত্রপাতই করবে না, বরং ওই অঞ্চলেও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ক্রমবর্ধমান তীব্র উত্তেজনা আর সংঘাতের মাঝে রাইসির মতো দেশটির প্রধান একজন রাজনৈতিক নেতার অনুপস্থিতি ইরানের ভেতরে এবং বাইরে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

যদিও দেশটির সরকারি ব্যাখ্যায় এখন পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারী বৃষ্টিপাত আর ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটের দৃষ্টিসীমায় ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে এই দুর্ঘটনায় শত্রুপক্ষের জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা ছড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাইসির মেয়াদ ও ইরানের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় শত্রু, এমনকি ইসরায়েলের মতো বহিরাগত ক্রীড়নকদের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়েও আলাপ উঠেছে।

হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইসরায়েল জড়িত?

ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এবং ইসরায়েলের ঐতিহাসিক বৈরী সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েল জড়িত থাকতে পারে বলে কিছু ইরানি সন্দেহ করছেন। দামেস্কে ইসরায়েলের একজন ইরানি জেনারেলকে হত্যা ও পরবর্তীতে ইসরায়েলে ইরানের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায় সৃষ্ট সাম্প্রতিক উত্তেজনা বিবেচনায় এই তত্ত্বটি অনেকের মনোযোগ কেড়েছে।

ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা এবং নিখুঁত অভিযান চালানোর জন্য ইসরায়েলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ব্যাপক পরিচিতি আছে। যদিও ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা কখনোই কোননো রাষ্ট্রের প্রধানকে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় সন্দেহবাদীদের ইসরায়েলি সংশ্লিষ্টতার তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছেন।

তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হত্যার ঘটনা সরাসরি যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাবে। এমনকি ইরানের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া আসবে। যদিও ঐতিহ্য বিবেচনায় ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিবর্তে সামরিক এবং পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতেই রয়েছে। ইকোনমিস্ট বলছে, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করার জোরালো কারণ রয়েছে। ইসরায়েল কখনও কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার মতো এতদূর অগ্রসর হয়নি। এর অর্থ হবে দ্ব্যর্থহীন যুদ্ধ; যা ইরানের তীব্র প্রতিক্রিয়া উসকে দেবে।

ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের এই ঘটনা এমন এক সময় ঘটেছে; যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলার মতো অনেক বিষয় রয়েছে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনজুড়ে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। বিশেষ করে ইসরায়েল এবং হামাসের চলমান যুদ্ধের মাঝে আঞ্চলিক এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ এক প্রান্তে পৌঁছেছে। ইরানের নেতৃত্ব নিয়ে যেকোনও ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তা এসব গোষ্ঠীকে সম্ভাব্য বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

 

 

Share this post

PinIt
scroll to top