কিডনি বিক্রি করা ব্যক্তিরা ভালো নেই – জয়পুরহাটের

9-12.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

অভাবের কারণে কিংবা প্রলোভনে পড়ে কিডনি বিক্রি করা মানুষগুলো ভালো নেই। কিডনি বিক্রি করে নানা ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যায় পড়েছে তারা। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার শতাধিক কিডনি বিক্রেতা বর্তমানে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে থাকলেও সামাজিক কারণে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাঁরা ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কিডনি বিক্রি করেছিলেন।

জয়পুরহাটে ২০১১ সালে তিন শতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রির খবর দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। গত দুই দিন সরেজমিনে কালাই উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিডনি বিক্রির পর তাঁরা কেউ ভালো নেই। বহুতি গ্রামের সাজেদা বলেন, ‘চক্রের ফাঁদে পড়ে কিডনি হারিয়েছি। এখন আমি সারাক্ষণ অসুস্থ থাকি।

তাঁর মতোই দুর্গাপুর গ্রামের সুলতানা বেগম বলেন, ‘অভাবের কারণে চক্রের ফাঁদে পড়ি। পরে তারা আমাকে ভারতে নিয়ে অনেকটা জোর করে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করে। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কোনো কাজ করতে পারি না।

সারাক্ষণ অসুস্থ থাকি।’
একইভাবে ওই এলাকার জাকারিয়া, তাঁর স্ত্রী শাপলা বেগমসহ আরো বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী দেশের তথ্যর কাছে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, কিডনি বিক্রি করা মানুষগুলোর কারো কোমরে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাসহ প্রায়ই লেগে থাকে জ্বর, সামান্য হাঁটাচলাতেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। কোনো ধরনের ভারী কাজ করতে পারেন না। সমাজের চোখেও তাঁরা খারাপ।

ফলে অনেকে সামাজিক কারণে ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে যান না।
এই মানুষগুলোর কেউ আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। কেউ-বা ভ্যান চালাতেন। কিডনি দেওয়ার আগে শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন তাঁরা। কিন্তু কিডনি বিক্রির পর এখন আর আগের মতো স্বাভাবিক কাজ করতে পারেন না। ঠিকভাবে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়, প্রায়ই ফুলে যায় চোখ-মুখ। শরীরের নানা জটিলতায় ওষুধ কেনার টাকাও নেই তাঁদের কাছে। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আতঙ্কে থাকেন।

জয়পুরহাটে ২০১১ সালে তিন শতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রির খবর দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। কিন্তু তার পরও থেমে নেই গোপনে কালাইয়ে কিডনি বেচাকেনা। পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় ওই সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কিডনি বিক্রির দালালচক্রের শীর্ষ সদস্যদের। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে তাঁরা গোপনে আবার কিডনি বেচাকেনা শুরু করেন। প্রশাসনের তৎপরতায় মাঝখানে কিছুটা সময় ভাটা পড়লেও এখনো গোপনে কিডনি বেচাকেনা চলছে। দালালচক্রের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে এখনো কিডনি বিক্রি অব্যাহত আছে। কালাই উপজেলা ছাড়িয়ে কিডনি বেচাকেনার এই অবৈধ প্রক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দেড় বছরে কালাই উপজেলার শাইলগুন গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে ওবায়দুর রহমান, মঈন উদ্দিনের ছেলে কাজল মিয়া এবং শফিকুলের স্ত্রী স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ভারতে গিয়ে কিডনি বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া গোবিন্দগঞ্জের রাজাবিরাট এলাকার আতিকুর রহমান, বাড়াল গ্রামের ঘরজামাই মঞ্জুরুল, লিডারসহ বেশ কয়েকজন কিডনি বিক্রি করেছেন। এলাকাবাসী জানায়, রাজাবিরাট এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যে কিডনি বেচাকেনা চলছে।

এ বিষয়ে কালাই থানার ওসি ওয়াসিম আল রাজি দেশের তথ্যর কাছে বলেন, ‘কিডনি কেনাবেচা চক্রের ওপর প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে। তবে এর পরও এলাকায় যারা কিডনি বেচাকেনা করছে তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’

Share this post

PinIt
scroll to top