কারিগরি শিক্ষার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভঙ্গি উন্নত করা জরুরী

kg78967868.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

সাতক্ষীরায় যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা শীর্ষক এক বৃহস্পতিবার (১৬ মে) শহরের অদূরে খড়িবিলাস্থ মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্টের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর উদ্যোগে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর সার্বিক সহযোগিতায় এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

সিপিডির ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা-২ আসনের এমপি ও ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আশরাফুজ্জামান, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম।

সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও কারিগরি) মঈনুল ইসলাম মঈন, সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার শাহজাহান কবির, সাতক্ষীরা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌস আরেফিন, সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মহানন্দ মজুমদার, সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এছমত আরা বেগম, দৈনিক দক্ষিণের মশাল পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিমুন শামস্, ফারহা দিবা খান সাথী, গাজী ইমরান, ইমান আলী, শ্যামল বিশ্বাস, কাজী আল হেলাল, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, সিপিডির ফেলো ও কোর গ্রুপ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান, মোজাহিদুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।

সিপিডি সংলাপে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। বাংলাদেশে সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরেন তিনি। সংলাপে সাতক্ষীরা কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা, দক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষা উপকরণের অভাব, অভিভাবকদের অসচেতনতা, প্রচার প্রচারণার অভাব, আন্তরিকতার ঘাটতি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও তার ফলোআপ না করা, উদ্যোক্তাদের পুঁজির অভাব, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, বাজার অনুযায়ী ট্রেড গঠন না করা, শিক্ষার আধুনিকায়নের অভাব, বাজেটে বরাদ্দ কম দেয়াসহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

সংলাপে সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, জেলায় দুটি স্থলবন্দর আছে। জেলার অনেকেই বিদেশে চাকরি করে। অনেক নারী বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সাতক্ষীরার অনেক ভূমিদস্যু সরকারি জমি দখল করে রেখেছে। ভূমিদস্যুদের কব্জা থেকে সরকারি জমি উদ্ধার করতে পারলে তা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। সুন্দরবনের মৎস্য ও মধু আহরণকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তারা অনেক উপকৃত হবে।

সাংসদ লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, ঘরে বসে থাকার কারণে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক উদ্যোগের কথা জনগণ জানতে পারেনা। জনগণকে সরকারের উদ্যোগের কথা জানাতে হবে। র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্যে সরকারের উদ্যোগ সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। বেশি করে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে যাতে মানুষ প্রত্যেকটি প্রকল্পের সুফল পায়। নারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ঘরে বসে থাকলে কেউ কর্ম খুঁজে দিবে না। নিজেদেরকে আত্মনির্ভররে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

সিপিডি’র ফেলো ও নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ এখন উত্তরণকালীন সময়ের মধ্যে আছে। মানসম্মত শিক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা আগামী দিনে যে নতুন ধরণের প্রযুক্তিগত বিপ্লব আসছে তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের পিছিয়ে-পড়া জনগোষ্ঠী, আমাদের নারীদের এখানে অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়ে জরুরি কারিগরি শিক্ষার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভঙ্গি উন্নত করা। এই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা না বদলাই তাহলে বাংলাদেশের আগামী দিনের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আমরা এক ধরণের প্রতারণা করব। এজন্য কারিগরি শিক্ষার জন্য সরকারের যেসব প্রচেষ্টা রয়েছে তা সেগুলোকে আরও আধুনিক ও উন্নত করা, তার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, শিক্ষকদের আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং একই সাথে বহুমুখী যেসব শিক্ষা চলছে সেগুলোকেও এই দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

এই সংলাপে উঠে এসেছে আগামী দিনে বাংলাদেশ গড়তে হলে, দক্ষ জনশক্তি গড়তে হলে এই মানুষগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। দেশের উত্তর অঞ্চল, দক্ষিণ অঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলের মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় করে বেকারমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা জেলার বিশিষ্টজনেরা, জেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, চেম্বারের প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।

Share this post

PinIt
scroll to top