দেশের তথ্য ডেস্ক।।
চট্টগ্রাম নগরীতে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এই অবস্থায় এদের বিরুদ্ধে অধিকতর তৎপর হয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে।
এ ছাড়া কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে নগরীর ১৬ থানা এলাকায় শুরু হয়েছে কাউন্সেলিংসহ সচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ। এদের তালিকা ধরে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকার পশ্চিম ফিরোজ শাহ হাউজিং এলাকায় দন্ত চিকিৎসক কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজাকে মারধর করছিল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে হামলার শিকার হন কোরবান আলী। পরে ১০ এপ্রিল মারা যান তিনি। এই ঘটনা চট্টগ্রামজুড়ে আলোচিত হয়।
গত ১১ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায় কিশোর গ্যাং ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে অধিকতর তৎপর হতে ১৬টি থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন সিএমপি কমিশনার। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে তারা কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করেছিল। সেই সময় নগরজুড়ে প্রায় ৫০টি গ্যাংয়ের অস্তিত্ব পেয়েছিল পুলিশ, গ্রুপগুলোতে ৫৫০ জনের মতো সদস্য ছিল। এদের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে এসেছিল ৪৮ জনের নাম।
বর্তমানে নগরীতে ২৫০টিরও বেশি কিশোর গ্যাং আছে বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেইস তৈরি করছি। ডাটাবেইস আগেই করা ছিল অল্প পরিসরে। বর্তমানে তা আপডেট করা হচ্ছে। যারা বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে অনেককে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া অভিভাবকদের কাউন্সেলিং এবং বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করছি। আইন প্রয়োগ থেকেও সামাজিক সচেতনতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, যেহেতু বয়স কম। যারা এদের পৃষ্ঠপোষক, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ কমিশনারের নির্দেশের পর সচেতনতামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি তালিকা হালনাগাদ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহার কাছে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে যারা ক্রাইম করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাদের অনুপ্রাণিত করলে সঠিক পথে ফিরে আসবে মনে করি, তাদের অভিভাবকের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়। গত ১০ মে কিশোর গ্যাংয়ের ১০ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। তারা জামিনে বের হয়ে এলাকায় শোডাউনের পরিকল্পনা নিলে থানায় এনে বোঝানো হয়েছে। গত কয়েক দিনে কিশোর গ্যাংয়ের কমপক্ষে ৩০ জন সদস্যকে থানায় এনে কাউন্সেলিং করা হয়েছে। সবাই কথা দিয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো অপরাধে জড়াবে না।’
আকবর শাহ থানার ওসি গোলাম রব্বানী বলেন, ‘কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক করছি, মসজিদ, স্কুল, কলেজে কথা বলছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতা কার্যক্রম চলছে। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’
তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের তালিকা হালনাগাদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। অপরাধের নেচারেই আমাদের প্রতিটি জিনিস হালনাগাদ থাকে। আশা করছি, পারস্পরিক কথাবার্তার মাধ্যমে এই দৌরাত্ম্য কমে আসবে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। কিশোর গ্যাংয়ের যারা প্রশয়দাতা, তাদেরও আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।’
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাং রোধে সচেতনতামূলক প্রগ্রামসহ যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এসব কর্মসূচি একটি নির্দিষ্ট সময়ে না রেখে ধারাবাহিকভাবে করতে হবে। এ ছাড়া সংশোধন হওয়ার পরে তরুণরা যেন স্বাভাবিকভাবে সমাজে বসবাস করতে পারে, তার একটা পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে।’