ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির গ্রাহক মো. শাহজাহান বসবাস করেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায়। প্রি-পেইড মিটারের সেবা নেওয়া এ গ্রাহক গতমাসে বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জ দিয়েছেন ২০০ টাকা।
তিনি বলেন, এমনিতে প্রতিবছর বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে আবার এসব অতিরিক্ত খরচ আমাদের জন্য বাড়তি বোঝা।
রাজধানীর মগবাজারে বসবাস করেন ব্যবসায়ী স্বপন আহমেদ। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক তিনি। বিদ্যুত বিলের পাশাপাশি ডিমান্ড চার্জের খড়্গ এসে পড়ায় ক্ষুব্ধ তিনি। বলেন, বিলের পাশাপাশি সরকারি ভ্যাট বা ট্যাক্সের বিষয়টি মানা যায়। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ নামক খরচটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একরকম জুলুম।
• ডিমান্ড চার্জ কী?
ডিমান্ড চার্জ মূলত বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা বা চুক্তিবদ্ধ লোডের নির্ধারিত চার্জ। ডিমান্ড চার্জের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, মালামাল, অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আদায় করে।
ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের মিটারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে। এই চুক্তিবদ্ধ লোড নির্ধারণের সময় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে।
• ইউনিট চার্জ ও ভ্যাট
ডিমান্ড চার্জ ছাড়া সাধারণত বিদ্যুৎ বিলে দুটো চার্জ থাকে। একটি হলো ইউনিট চার্জ, অন্যটি ভ্যাট। ইউনিট চার্জ গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণের ওপর নির্ধারিত হয়ে থাকে। আর ভ্যাট সরকারের নির্ধারিত হারে প্রযোজ্য হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন অনুযায়ী সব ধরনের গ্রাহকের (প্রিপেইড-পোস্টপেইড) ক্ষেত্রেই ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য করা হয়েছে, যা ২০১৭ সাল থেকে প্রযোজ্য করা হয়।
• ডিমান্ড চার্জে স্বচ্ছতা নেই
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা যেন সাশ্রয়ী হয় সেজন্য ডিমান্ড চার্জের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাদের বিল বেশি আসবে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণের স্বচ্ছতা নিয়ে। সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য গড়ে সাড়ে আট শতাংশ বাড়লেও ডিমান্ড চার্জ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিতরণ সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা, যা মূল্য সমন্বয়ের পূর্বে ছিল ৩৫ টাকা। প্রায় ২০ শতাংশ ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধির ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমান্ড চার্জের যৌক্তিকতা নেই। গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে লোড নির্ধারণ করলে বাকি সব গ্রাহকদের ডিমান্ড চার্জের বোঝা বইতে হবে না।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন অনুযায়ী সব ধরনের গ্রাহকের (প্রিপেইড-পোস্টপেইড) ক্ষেত্রেই ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য করা হয়েছে, যা ২০১৭ সাল থেকে প্রযোজ্য করা হয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব গ্রাহক চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাদের বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য ডিমান্ড চার্জ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, নির্দিষ্ট গ্রাহকের কারণে অন্য গ্রাহকদেরও, যারা অতিরিক্ত কিলোওয়াট চাননি, ডিমান্ড চার্জটা দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এর সমাধান হতে পারে, যারা অতিরিক্ত ডিমান্ড দেননি বা চাহিদা নেই তাদের ক্ষেত্রে এই চার্জ প্রত্যাহার করে নেওয়া। এক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানিকে একটা সমন্বয়ের আওতায় আসতে হবে। যদি কেউ চাহিদার অতিরিক্ত কিলোওয়াট ব্যবহার করেন তার ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জটা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে যোগ করে দিতে হবে।
বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, বিদ্যুতের ট্যারিফ বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে খরচ বেড়েছে। ফলে বিলের সঙ্গে ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গেই ডিমান্ড চার্জ বেড়েছে। গ্রাহক যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন সে অনুযায়ী ডিমান্ড চার্জ আসবে। গ্রাহক যদি সাশ্রয়ী হন তাহলে চার্জের পরিমাণও কমে আসবে।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো. জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের (বিতরণ কোম্পানির) অবকাঠামোগত ব্যয় বেড়েছে। তাই ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।