অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা প্রতিনিধিঃ খুলনার কয়রা উপজেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ব্যাপক ক্ষতি করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কোন ক্ষতিপূরণ না দিয়েই রেকডিও জমি থেকে মাটি কেটে গর্ত তৈরি করা হচ্ছে। উপড়ে ফেলা হচ্ছে গাছপালা, তুলে দেয়া হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হতদরিদ্র পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, অসহায় পরিবারগুলো বেড়ীবাঁধ নির্মাণে গতিপথ পরিবর্তন নাকরার দাবীতে শুক্রবার (১০ মে) সকাল ১০টায় উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী শাকবাড়ীয়া গ্রামের বাঁধে মানববন্ধন করেছেন।
জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী শাকবাড়ীয়া ও হরিহরপুর গ্রামে প্রায় ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে ৭টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বাঁধ নির্মাণ কাজের জন্য অনুমতি ছাড়াই বাঁধের পাশের রেকডিও জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন তারা। এতে স্থানীয় জমি মালিকরা বাধা দেয়। জমি মালিকরা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকেই।
মানববন্ধনে উপস্থিত এলাকাবাসি জানান, ঠিকাদারের লোকজন প্রথমে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ক্ষতি পূরণের আশ্বাস দিয়ে জমি থেকে অপরিকল্পিতভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছেন কিন্তু কোন প্রকার ক্ষতি পূরণ না দিয়ে তারা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে যেভাবে মাটি কেটে নিচ্ছেন তাতে আগামী দশ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না।
মানববন্ধনে উপস্থিত শাকবাড়ীয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুর আগে পাউবো কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারের লোকজন বলেছিলেন-নদীর চরে ৩০০ ফুটের মাথায় প্রটেকশন বাঁধ দিয়ে বালি ভরাট করে পূরানো বেড়ীবাঁধের বাইরে নতুন বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হবে। সে মোতাবেক কিছু অংশ কাজ করার পর হঠাৎ বেড়ীবাঁধের গতিপথ পরিবর্তন করে পূরানো বেড়ীবাঁধের ভিতর দিয়ে বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জন্য কা্রেন্টের পিলার উঠিয়ে বাড়ীর মধ্য দিয়ে পিলার পুঁতে দিচ্ছে। এর আগে চরে লাল ফ্লাগ টানিয়ে চর বনায়নের গাছও কেটে ফেলা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে তারা বাঁধের ভিতরে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে মাটি ও গাছ কাটা শুরু করেন। দু’পাশের অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে এলাকার মানুষের অনেক জমি নদীতে চলে গেছে। এখন যেটুকু জমি আছে সেখান থেকে এভাবে মাটি কেটে নিলে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক সবিতা রানী সরকার বলেন, বাঁধের পাশে আমার চার বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড জমি অধিগ্রহণ না করেই তারা বাঁধ নির্মাণ করে। আমার জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নিয়েছে। বাধা দিলে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো সুরাহা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে আমরা জমির মালিকরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।
গ্রামের রেনুকা রানী মন্ডল বলেন, মাটি কাটার সময় বাড়ির গাছপালা তো কাটছেই, এরপর দেখছি কারেন্টের খুঁটিগুলোও সরিয়ে এনে বাড়ির মধ্যে দিয়ে পুতে দিচ্ছে। এছাড়া রাতের অন্ধকারে আমার দশ কাঠা জমির মাটি কেটে গর্ত করেছে। আগে ওয়াপদার বাইরে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও ওয়াপদার ভিতর দিয়ে বেড়ীবাঁধ নির্মাণের পাঁয়তারা করছে ঠিকাদারের লোক। আমরা চাই পূর্বে যেখান থেকে বাঁধ নির্মাণ করার কথা ছিল সেখানে দিয়ে বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন এ্যান্ড কোং এর পক্ষে কাজের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, বাঁধের পার্শবর্তি নদীর চরে পর্যাপ্ত মাটি না থাকায় কাজের স্বার্থে ভিতরের জমি থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এতে যেসব মালিকের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তারাই দেখবেন। আপাতত বিদ্যুতের খুঁটি আর সরানোর প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি।
পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিকুর রহমান বলেন, জমি মালিকদের ক্ষতি পুরন দাবীর বিষয়টি প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সামনে বর্ষা মৌসুম এ মূহুর্তে কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। এ জন্য জমি মালিকদের বুঝিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।