দেশের তথ্য ডেস্ক।।
ঢাকার অদূরেই গাজীপুরের কাপাসিয়া থানা। এ থানাতেই কর্মরত পুলিশের এসআই নাজনীন আক্তার। তিনি আগে রাজধানীর ডেমরা থানায় কর্মরত ছিলেন। এ থানারই একটি মামলার বাদী তিনি। ২০২১ সালের ২৯ জুনে ৫০ গ্রাম হেরোইন রাখার অভিযোগে কামাল হোসেন (৪১) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়। এ মামলার সাক্ষী একই থানারই কনস্টেবল ছানোয়ার হোসেন। গত প্রায় আড়াই বছরেও এ মামলার সর্বশেষ খবরাখবর জানেন না তারা।
এসআই নাজনীন আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, ডেমরা থানাতে থাকতে মামলাটির চার্জশিট হয়েছিল। এরপর তা আদালতে বিচারাধীন। আর কোনো খবর আমার কাছে নেই। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে দীর্ঘ হচ্ছে নিষ্পত্তি না হওয়া মাদক মামলার সংখ্যা। আর চার্জশিটের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সাক্ষ্য, আলামত জব্দ তালিকার গরমিলসহ বেশ কয়েকটি কারণে সাজা থেকে বেঁচে যাচ্ছে মাদক মামলার অনেক আসামি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে মাদকসংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৮২ হাজার ৮২৯টি। তবে গত পাঁচ বছরে এ-সংক্রান্ত ১১ হাজার ১৬৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারাধীন মামলার যে সংখ্যা তা অনেক। এই জটের বিভিন্ন কারণ আছে। তবে এখন আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশই সাক্ষ্য গ্রহণ হয়ে থাকে। আর যারা নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকেন তাদের অনেকেই সাক্ষী দিতে আসেন না। আবার যারা আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, এদের কেউ কেউ অবসরে যাওয়ার পর আর সাক্ষী দিতে আসেন না। এসব কারণে মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগছে। তবে আমাদের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সভা এবং জেলা কর্মকর্তাদের সভাতে সাক্ষ্য নিয়ে বিশ্লেষণ হয়, এতে করে এই জট আস্তে আস্তে কমে আসছে। জানা গেছে, পুলিশ সদর দফতর মাদক মামলায় সাজার হার বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিতে না গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সদর দফতরের নির্দেশনার পর ডিএমপির ৫০ থানার কর্মকর্তাদেরও তদন্তে ফাঁক না রাখার এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মাদকের ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪০ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫২১ জনকে। একই সময়ে বিভিন্ন আদালতে ৩৪ হাজার ৪৫৭টি মামলার রায় হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৮১২টি মামলায় সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছে ১৭ হাজার ৬৪৫টি মামলায়। আসামি ছিল ৩৭ হাজার ৬৭ জন। এর মধ্যে সাজা হয়েছে ১৭ হাজার ৪২৪ জনের। খালাস পেয়েছে ১৯ হাজার ৬৪৩ জন। পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, সারা দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ মামলা হয়, তার মধ্যে মাদকের থাকে ৪০ শতাংশ। আর প্রতিদিন প্রচুর মাদকের মামলা হয় কিন্তু সেই অনুপাতে তো নিষ্পত্তি হয় না। যে কারণে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা মাস শেষে বাড়তেই থাকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালে মাদক মামলায় সাজার হার ছিল ৫৫ শতাংশ। গত বছর সেই হার দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশে এবং চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সাজার হার ৪৩ শতাংশ। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মাদক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৩টি। এসব মামলায় সাজা হয়েছে ১৯ হাজার ৪১ জনের এবং খালাস পেয়েছেন ২১ হাজার আসামি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. এহসান হাবিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাদক মামলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত সাক্ষী আনতে পারে না। যেসব সাক্ষী আসে তারা ঠিকমতো সাক্ষ্য দেয় না। এর মধ্যে অপর্যাপ্ত আদালতের সংখ্যা আছে। এসব কারণে মামলার জট লেগে যায়। সরকার চাইলে এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে পারে। এর জন্য সরকার মাদক মামলার ক্ষেত্রে বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা করতে পারে। কিছু কিছু মামলায় দীর্ঘ সময় বিচারাধীন থাকার ক্ষেত্রে আসামিপক্ষের আইনজীবীদেরও গাফিলতি থাকে।