দেশের তথ্য ডেস্ক।।
খোলাবাজারে ডলারের দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সিদ্ধান্তে ডলারের খোলাবাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এক দিনের ব্যবধানে ৭ থেকে ৯ টাকা বেড়েছে গেছে দাম। গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে ডলার কেনাবেচা হতে দেখা যায়নি।
পোস্টারে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল দিলে একটি মানি এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কালের কণ্ঠকে জানান, ‘আজ সরকারি বন্ধ, তাই আমাদেরও ছুটি। আপনার বেশি প্রয়োজন হলে আমি পৌঁছে দিতে পারি। সে ক্ষেত্রে যাতায়াত খরচ দিতে হবে।’ খোলাবাজারের বর্তমান দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কার্ব মার্কেটে ১২৫ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে।
তবে আগামী দিনগুলোতে ডলারের দাম আরো বাড়তে পারে।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের জনতা মানি এক্সচেঞ্জের একজন কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আজ (গতকাল) ডলার দেওয়া যাবে না। কাল এলে দিতে পারব। তবে সকাল সকাল না এলে ১২৫ টাকার চেয়ে বেশি দামও দিতে হতে পারে।
ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং ডলারের দাম একলাফে সাত টাকা বৃদ্ধি ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতিবিদ এবং আমদানি ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপের পর এখন কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বা ব্যবসার খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ব্যবসার খরচ বেড়ে গেলে পণ্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ আরো চাপে পড়বে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারকরা বলছেন, প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারিত একটি সীমার মধ্যে ধরে রাখলেও বাস্তবে কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে তাঁদের ১১৭ থেকে ১২০ টাকায় ডলার কিনতে হয়েছে।
ব্যাংককে অতিরিক্ত দাম পরিশোধ করতে হতো ভিন্ন পন্থায়। এখন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হওয়ায় ভিন্ন পন্থায় আর বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে না। ফলে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি আপাতত তাঁদের খুব বেশি চাপে ফেলবে না। তবে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থা (ক্রলিং পেগ) কিভাবে কার্যকর করছে, তার ওপর নির্ভর করবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার ডলারের দাম ও ঋণের সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ঋণের শর্ত পালনের অংশ হিসেবে ডলারের দাম ১১০ থেকে একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণের ক্ষেত্রে স্মার্ট বা ‘সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ ভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি বাতিল করে বাজারভিত্তিক করা হয়। একই সঙ্গে বেড়েছে নীতি সুদহার।
তবে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, সুদ বাজারভিত্তিক হলেও তা যেন বর্তমানের চেয়ে ১ শতাংশের বেশি না বাড়ে। গত মাসে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
একবারে ডলারের বড় মূল্যবৃদ্ধির সুফল অবশ্য দ্রুতই পাবেন রপ্তানিকারকরা। একাধিক রপ্তানিকারক বলছেন, যদি ব্যবসার খরচ নতুন করে আর না বাড়ে, তাহলে ডলারের বাড়তি দামের সুবিধা রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি লাভবান হবে।
তাঁরা মনে করছেন, নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে রপ্তানি আয় যেমন বাড়বে, তেমনি বৈধ পথে প্রবাস আয় বৃদ্ধিরও বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ডলার সংকটের এই সময়ে রপ্তানি ও প্রবাস আয় বাড়লে তা সংকট কাটাতে কাজে লাগবে।
তবে ডলারের দাম একলাফে ৬.৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। এতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, এই চাপ মোকাবেলায় সরকারকে ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।