এমপিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আধিপত্য বজায় রাখলেন

31.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। গত বুধবার অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে কয়েকটি বাদে সব উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এঁদের মধ্যে সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয় রয়েছেন এক ডজন।

বুধবার স্থানীয় সরকারের ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

এসব উপজেলার ভোটের বেসরকারি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ১১০টিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠরা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১১ জন স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয়।
তথ্য মতে, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে মরিয়া ছিলেন। অনেক সংসদ সদস্যই উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে নানা কৌশল নেওয়া হয়। প্রশাসনকেও কঠোর হতে নির্দেশ দেয় সরকার।
সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠরা জয় পেলেন যেসব উপজেলায়

মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ ভোটে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ঘনিষ্ঠ দুই নেতা জয় পেয়েছেন। পিরোজপুর সদর উপজেলায় এস এম বাইজিদ হোসেন, নাজিরপুরে এস এম নূরে আলম শাহীন, ইন্দুরকানীতে জিয়াউল আহসান গাজী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এই তিন চেয়ারম্যানই স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন ইকবাল হোসেন খান ও আলাউদ্দিন মিয়া। দুজনই স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় নির্বাচিত হয়েছেন একসময়ের বিএনপি নেতা এমদাদুল হক জুটন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল ও কালাই—এই তিন উপজেলায়ই স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠরা জয় পেয়েছেন। সিরাজগঞ্জের সদর, কাজিপুর, বেলকুচি—এই তিন উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজনরা বিজয়ী হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে চেয়ারম্যান হয়েছেন মাকসুদ হোসেন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।

চট্টগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ নেতারা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এমপির আত্মীয়দের মধ্যে ১১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন

বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহাদারা মান্নানের ছেলে ও ভাই দুই উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল সারিয়াকান্দি উপজেলায় এবং ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন সোনাতলা উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা বিশ্ব প্রদীপ কারবারী রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় জয়ী হয়েছেন আলী মুনছুর বাবু। তিনি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের আপন ভাই। মাদারীপুর সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আসিবুর রহমান খান। তিনি মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন আতাউর রহমান আতা। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের চাচাতো ভাই।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচা ও এক চাচাতো ভাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়েন। তাঁদের মধ্যে জয়ী হন ছোট চাচা শফিকুল ইসলাম।

এর আগে হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী অমি এবং মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের চাচা আনিছ উজ্জামান আনিস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

দেড় ডজন উপজেলায় এমপির বিরোধী পক্ষ জয়ী

টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হিরা ধনবাড়ী উপজেলায় নির্বাচনে হেরে গেছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থন ছিল হিরার পক্ষে।

নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খানের শ্যালক শরীফুল হক পলাশ উপজেলা নির্বাচনে হেরেছেন। মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ভাগ্নে সোয়েব আহমেদ বড়লেখা উপজেলায় পরাজিত হয়েছেন। ওই দুই উপজেলায়ই এমপির বিরোধী পক্ষ জয় পেয়েছে।

নাটোর সদর উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

ফরিদপুর সদরে নির্বাচিত হয়েছেন শামচুল আলম চৌধুরী। দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা এই নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে আজাদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আমানত হোসেন খান। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির দূরত্ব রয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর, নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা উপজেলায় সংসদ সদস্যের বিরোধী পক্ষ জয় পেয়েছে। এর বাইরে আরো অন্তত আটটি উপজেলায় সংসদ সদস্যের বিরোধীরা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

জয় পেয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত কয়েক নেতা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আনোয়ারুল ইসলাম, গোমস্তাপুরে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আশরাফ হোসেন আলিম, বান্দরবান সদরে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবদুল কুদ্দুছ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

Share this post

PinIt
scroll to top