দেশের তথ্য ডেস্ক।। চট্টগ্রাম বিভাগের চার জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাঙ্গামাটির দুই উপজেলায় তিনজন, কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুইজন, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় একজন ও কুমিল্লার চার উপজেলায় চারজনের মৃত্যু হয়।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুই উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়া ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লকে এবং দুপুরে একই উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায় এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- সদর উপজেলার সিলেটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজির (৫০), বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম (৫৫) ও সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায়বেটলিং মৌজার কারবারি মিথুন ত্রিপুরার বোন তনিবালা ত্রিপুরা (২৫)।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবর বলেন, সকালে শহরের সিলেটিপাড়া থেকে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বজ্রপাতে মারা গেছেন।
অন্যদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মোট দুইজনের মৃত্যু হয়েছে আজ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থকে প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বজ্রপাতের সময় সবাইকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
কক্সবাজার
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্যাদিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকার জমিরের ছেলে দিদারুল ইসলাম (৩৫) ও রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকার জামালের ছেলে মো. আরমান (২৫)।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মগনামার কোদাইল্যাদিয়ায় ভোরে দিদারুল ইসলাম লবণের মাঠ পরিচর্যা করতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, গতকাল রাতে প্রচুর বজ্রপাত হয়। ভোরেও বজ্রপাত অব্যাহত থাকে। রাতের বৃষ্টিতে লবণের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষি আরমান তা পরিচর্যা করতে যান। ওই সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ঝাড়ো বাতাসে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
ইয়াছিন আরাফাত বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জানা যায়, সকালে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে বাড়ির উঠানের পাশেই কাঁচা আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
বড়নাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাতের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, সকালের দিকে বজ্রাঘাতে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক। তাদের পরিবারকে প্রশাসনিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার চান্দিনা, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ ও দেবিদ্বার উপজেলায় মোট চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে দুজন কৃষক বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও নিহতদের স্বজনদের মাধ্যমে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ঢাকা পোস্ট।
মৃতরা হলেন- চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে কৃষক দৌলতুর রহমান (৪৭), বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার কুদ্দুস মিয়ার ছেলে কৃষক আলম হোসেন, দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান ও সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, বিকেলে চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নে ধানের জমিতে কাজ করছিলেন দৌলতুর রহমান। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দৌলতুর রহমান বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন।
অন্যদিকে বুড়িচং উপজেলায় ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আলম হোসেন নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার কুদ্দুস মিয়ার ছেলে। এছাড়াও বজ্রপাতে দেবিদ্বার উপজেলায় মোখলেছুর রহমান নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ধামতী এলাকার বাসিন্দা।
অপরদিকে বজ্রপাতে সদর দক্ষিণ উপজেলায় আতিকুল ইসলাম নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের বাসিন্দা।