বেদখল হাজার কোটি টাকার জমি

BD-Pratidin_2024-05-01-06.jpg
দেশের তথ্য ডেস্ক।। নারায়ণগঞ্জে যে যেখানে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে দখল করে নিচ্ছে রেলের সম্পত্তি। এক জরিপে দেখা গেছে, শুধু নারায়ণগঞ্জ-কমলাপুর ও নারায়ণগঞ্জ-চাষাঢ়া-আদমজী রুটে রেলের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন দখলদার। রেলওয়ের এই সম্পত্তি দখলদারদের মধ্যে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, মাস্তান, রেলওয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ রেলের ইতিহাস অনেক পুরনো। জেলায় ১৮৮২ সালে চলমান রেলপথ (লাইনের) নির্মাণে দুই পাশে ৬২ ফুট প্রশস্ত জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল। ১৮৮৫ সালের ৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন স্থপিত হয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ আদমজী জুট মিলকে কেন্দ্র করে গুরুত্ব পায় নারায়ণগঞ্জ রেলপথ। ২০০২ সালের ৩০ জুন সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ করে দেওয়া হয় আদমজী জুট মিল। এরপর ধীরে ধীরে নারায়ণগঞ্জ টু আদমজী রেল রুটের দুই পাশের জায়গা দখল হয়ে যায় স্থানীয়দের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, কমলাপুর টু নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে দুই পাশে হাজার হাজার অবৈধ দখলদার এখনো রয়ে গেছে। দুই পাশের ৬২ ফুট জায়গা চলে গেছে দখলদারদের অধীনে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া টু আদমজী পুরাতন পরিত্যক্ত রেল লাইনের দুই পাশের সম্পত্তিতে দখল করা জমিতে নির্মাণ হয়েছে অসংখ্য মার্কেট, দোকানপাট ও বসবাসের ঘর। প্রতিদিনই কেউ না কেউ এ রেলওয়ের জমি দখল করে নিচ্ছে। দখলে যোগ দিয়েছে স্থানীয় বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। বর্তমানে দখল হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ টু আদমজী রেলওয়ে সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের দুই পাশে প্রায় ৮০ একর জায়গা বেদখল হয়েছিল। এর মধ্যে কমলাপুর নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ডাবল লাইন নির্মাণকাজে শুরুতে গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০-৪০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৫০ একরের মধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জ শহরেই বেদখল ৪০ একর জমি। এই জায়গার প্রতি একর জমির বর্তমান বাজারমূল্য রয়েছে ২০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৪০ একরের মূল্য হয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। শহর ঘুরে দেখা যায়, কমলাপুর টু নারায়ণগঞ্জের শহরের ১ নম্বর রেলগেট ও ২ নম্বর রেলপথের দুই পাশে রেলের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে হাজারের বেশি কাঁচা-পাকা দোকানপাট। অভিযোগ রয়েছে, একটি দখলদার চক্র রেলওয়ের অসাধু একটি পক্ষকে ম্যানেজ করে নামমাত্র লিজ নিয়ে এসব রেলের সম্পত্তি দখল করে আছে। লিজের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে মেয়াদোত্তীর্ণ লিজেই চলছে দখলদারি। এতে সরকার রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। কিছু অসাধু রেলওয়ে কর্মকর্তা লাইনম্যান রেখে ওইসব অবৈধ দোকানপাট থেকে মাসিক ভাড়া নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের নামে। এসব দখলদারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ৭০-৮০টি মামলা করেছেন। কোথাও কোথাও উদ্ধার হওয়া জায়গা আবার দখল হয়ে গেছে । এদিকে চাষাঢ়া টু আদমজী রেলওয়ের জায়গা প্রসঙ্গে স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ে থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রয়োজনীয় অংশ নিয়ে চাষাঢ়া টু আদমজী রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। দুই পাশের বাকি জায়গাও সরকারি হিসাবে আছে। তবে সেগুলো বিভিন্ন দখলে। বিশেষ করে কিছু রেলের অসাধু কর্মকর্তার আশ্রয়ে অবৈধ দখলদাররা রেলের ভূমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছেন। দখলের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সময় আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। খুব শিগগিরই অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top