বিশ্বের বৃহত্তম পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার নির্মাণকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান ডাইকি অ্যাক্সিস সম্প্রতি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। বাংলাদেশের চার্ম লিমিটেডের সাথে জাপানের এই প্রতিষ্ঠানটি যৌথ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ‘ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশ’ এর যাত্রা শুরু করেছে। সম্পূর্ণভাবে জাপানের বিনিয়োগে ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশ এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশ’ কোম্পানির উদ্বোধন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন জাপান দূতাবাসের মিনিস্টার মি. তাতসুয়ান মাচিদা। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাইকি অ্যাক্সিসের চেয়ারম্যান মি. হিরোশি ওগেম এবং প্রেসিডেন্ট মি. হিরোকি ওগেম।
দেশে এই বিদেশি উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। অতিথিবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, বুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার, এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
পৃথিবীর অন্যান্য শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক থেকে শীর্ষের দিকে ঢাকা। ফলে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) বা পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার বাধ্যতামূলক করা দরকার বলে মনে করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ঢাকার শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, যেকোনো নদীতেই যাবেন, কোনো নদীতেই সাঁতার কাটার কিংবা গোসলের পরিস্থিতি নেই। এ অবস্থায় ডাইকি যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি প্রশংসনীয়। আমি আশা করি, জাপানি কোম্পানি ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশে পানির দূষণ কমাতে সাহায্য করবে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্যুয়ারেজ কানেকশন সরাসরি ক্যানেল, স্ট্রং ড্রেনে দিতে পারি না। সেক্ষেত্রে জাপানের এ জোকাসু প্রযুক্তি মডেল সমাধান এনে দিতে পারে। যার মাধ্যমে বর্জ্য পানি নিষ্কাশন হবে। আলাদা লাইনের দরকার হবে না। তারা বাংলাদেশে ফ্যক্টরি করার চেষ্টা করছে। আমি নিজেই এ মডেল আমার বাসায় রেখেছি, যা পরিবেশের ক্ষতি করছে না।’
জাপান থেকে এই বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশ, দেশে স্থানীয়ভাবে পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার বা স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নির্মাণ শুরু করছে। এতে পানি পরিশোধনাগার প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হবে জাপানি টেকনোলজি- জোকাসু। মূলত বর্জ্য পানির পুনর্ব্যবহার এবং পরিবেশের গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জোকাসু প্রযুক্তি কার্যকরী। ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো দেশে সবচেয়ে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি পরিবেশ রক্ষা করা।
অনুষ্ঠানে গণপূর্ত বিভাগ (পিডব্লিউডি) এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে (ডিএনসিসি) ‘ডাইকি অ্যাক্সিস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ফর এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন ২০২৪’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। রাজধানী ঢাকাতে খাল সংরক্ষণে এবং পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ডাইকি অ্যাক্সিসের পক্ষ থেকে এই সম্মাননা দেয়া হয়।
বাংলাদেশের চার্ম লিমিটেডের সাথে স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশেও ডাইকি অ্যাক্সিস নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। পানি পরিশোধনের ব্যবস্থাগুলোর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ডাইকি অ্যাক্সিস ২০২৪ সালে চার্ম লিমিটেডের সহযোগিতায় ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। এই যৌথ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে জাপানের জোকাসু প্রযুক্তিতে পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা।
জোকাসু সিস্টেম ও প্রযুক্তি সর্বপ্রথম ভূমিকা রাখে জাপানের স্যুয়েজ সিস্টেমকে উন্নত করতে। যার ব্যবহার পরবর্তীতে অন্যান্য দেশে শুরু হয়। জোকাসুর পণ্যগুলো জাপান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত যা সরকারের পলিসির অংশ হিসাবে জাপান জুড়ে ব্যবহার করা হয়।
জোকাসু প্রযুক্তির এমন ব্যাপক প্রভাব থাকায় এর মাধ্যমে ‘ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশ’ দেশের দূষিত পানি ও পরিবেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন, নদীতে আসা কল-কারখানার আর কৃষিজ বর্জ্য সবচেয়ে বেশি এ দেশের পরিবেশ দূষিত করছে। দেশের পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাকে লক্ষ্যে রেখেই ডাইকি অ্যাক্সিস বাংলাদেশ তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। যা একইসাথে জনস্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি একটি টেকসই পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।