দেশের তথ্য ডেস্ক।। মঙ্গলবার রাত থেকেই ছোট ছেলের জ¦র। সকালে পাতলা পায়খানা হওয়ায় বুধবার বেলা ১১টায় সন্তানকে নিয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালে ছুটে যান টুটপাড়া এলাকার রিক্সা চালক মো. সোলায়মান। বহির্বিভাগে চিকিৎসক দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ভর্তি কেন্দ্রে গিয়ে তিনি জানতে পারেন শিশু হাসপাতালের কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। উল্টো ভর্তির সিরিয়ালে রয়েছেন ২২ জন রোগী।
সেখানে ওষুধ কোম্পানির এক প্রতিনিধির পরামর্শে ছেলেকে নিয়ে যান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গিয়ে দেখেন, সেখানেও শয্যা ফাঁকা নেই। তবে শিশুর অবস্থা অবনতির দিকে যাওয়ায় তাকে ভর্তি করে মেঝেতে রেখে স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসকরা।
দুপুর ২টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মো. সোলায়মানের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, তখন আরও কয়েকজন রোগীকে মেঝেতে ভর্তি হতে দেখা গেল। কর্তব্যরত নার্সরা জানান, শয্যা ফাঁকা না থাকায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শুধু খুলনা শিশু হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই নয়; তীব্র তাপদাহে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে রোগীর চাপ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুরা। শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া, জ¦র ও ঠান্ডা-গরম লাগার প্রবণতা বেশি।
খুলনা শিশু হাসপাতাল
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনা শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে শিশু রোগীর স্বজনদের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিটি শিশুর সঙ্গে একাধিক স্বজন হাসপাতালে আসায় ভিড় আরও বেড়েছে। বেশিরভাগ শিশুই ডায়রিয়া, জ¦র, ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত।
গোবরচাকা এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগম বলেন, মঙ্গলবার থেকেই ৩ বছরের বাচ্চার পাতলা পায়খানা হচ্ছে। বাড়িতে স্যালাইন খাইয়েছি, ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পায়খানা না কমায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। সকাল থেকে লম্বা লাইন। আরও ১১ জনের পরে আমাদের সিরিয়াল।
খুলনা শিশু হাসপাতালের ভর্তি তথ্য কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, ২৭৫ শয্যার হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে ২৪৭টি। গত দুই সপ্তাহ ধরে সব শয্যাই পূর্ণ থাকছে। প্রতিদিন ৩০-৪০টি শয্যা খালি হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে একই সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, হাসপাতালে ভর্তির জন্য এখন সিরিয়াল রাখা হচ্ছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আল আমিন রাকিব জানান, গত ৮/১০ দিন ধরে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক রকম বেড়েছে। আগে বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০টির মতো শিশু রোগী চিকিৎসা নিতো। মঙ্গলবার চিকিৎসা নিয়েছে ৬৫০ জন। বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪৮২ জন চিকিৎসা নিয়েছে। সিরিয়ালে আছে আরও দেড় শতাধিক রোগী।
তিনি বলেন, হাসপাতালে শয্যার বাইরে কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না। এ কারণে যতগুলো শয্যা ফাঁকা হচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ভর্তি করতে না পারায় প্রতিদিন অনেক রোগীকে ফেরত পাঠাতে হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দুপুর ২টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীদের প্রচন্ড ভিড়। আন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীও বেড়েছে। বুধবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি রয়েছেন ১ হাজার ৪৪৩ জন।
হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৪৮টি। অথচ ওই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১৩৯টি শিশু। শয্যা না থাকায় রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝে, বারান্দায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, শয্যা পরিপূর্ণ থাকার পরেও রোগী আসতে থাকে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেই কিভাবে? এজন্য মেঝে-বারান্দায় যেখানে ফাঁকা পাওয়া যায়, সেখানে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গরমের কারণে ডায়রিয়া ও জ¦রে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অন্যান্য রোগী স্বাভাবিক রয়েছে।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল
তীব্র তাপদাহে খুলনার একমাত্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। নগরীর মীরেরডাঙ্গায় অবস্থিত এই হাসপাতালেও শয্যা ফাঁকা নেই। মাত্র ২০ শয্যার এই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য শয্যা বরাদ্দ ১০টি। কিন্তু রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় সেটি বাড়িয়ে ১৪টি করা হয়েছে। তারপরও প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ফিরে যাচ্ছেন।হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, তীব্র তাপদাহে রোগীর চাপ বেড়েছে। গত ২৩ দিনে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় তিন শতাধিক রোগী। শয্যা সীমিত থাকায় রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।