মিলন হোসেন বেনাপোল,প্রতিনিধি।। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পণ্যজট কমাতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রচণ্ড গরমে শ্রমিকরা কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তীব্র গরমে একটানা কাজ করতে পারছেন না বেনাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিকরা। ফলে তাদের আয় কমার পাশাপাশি বন্দরে ট্রাকে পণ্য লোড-আনলোডে দেখা দিয়েছে ধীর গতি। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, আগে ২০ জন শ্রমিক তিন ঘণ্টায় একটি ট্রাকের পণ্য আনলোড করত। আর এখন সময় লাগছে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। তীব্র খরতাপে দিনমজুর বন্দর শ্রমিকদের কষ্ট-দুর্ভোগ বাড়ছে। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক শ্রমজীবী মানুষ। যশোর মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, রোববার বেলা দেড়টায় যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু শনিবার গত কয়েকদিনের সব রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক জালাল উদ্দিন রহমান বলেন, “গত ২ সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড গরম। এই গরমে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি একটানা কাজ করা যাচ্ছে না। গরমে দুপুরে কোনো কাজ করাই সম্ভব হচ্ছে না।” আরেক শ্রমিক ইউনুছ আলি বলেন, “আগে ২০ জন শ্রমিক তিন ঘণ্টায় একটি ট্রাকের পণ্য আনলোড করতাম। এখন সময় লাগছে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। অনেকে গরমে কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছি।” সেলিম আহম্মেদ নামের এক শ্রমিক বলেন, “অন্যান্য সময় সারাদিন কাজ করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতাম। এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এক টানা কাজ করতে না পারায় আয় কমেছে।” এই বন্দরের ট্রাক চালক রেজাউল ইসলাম বলেন, “গরমের কারণে শ্রমিকরা সেভাবে কাজ করতে পারছে না। সময় মত ট্রাক লোড হচ্ছে না। তাই আমাদেরও সময় অপচয় হচ্ছে। বন্দরে বেশি সময় বসে থাকতে হচ্ছে।” বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক আবু নিদাল ফয়সল বলেন, “গরমের কারণে শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে না পারায় ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। ট্রাকে পণ্য লোড করতেও তুলনামূলক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে সময় মত পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।” বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৯২৫) সভাপতি রাজু উদ্দিন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার বেশি গরম পড়েছে। শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে না পারায় পণ্য উঠানামায় (লোড-আনলোড) বিলম্ব হচ্ছে, ব্যবসায়ীরাও বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু গরম উপেক্ষা করেই শ্রমিকরা কাজ করছেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের আয়ও কমে গেছে।” রাজু আহম্মেদ বলেন, “এক ট্রাক লোড দেওয়ার পর বিশ্রাম নিয়ে আবার আরেক ট্রাক লোড দিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন যেখানে ২০ ট্রাক লোড হত। বর্তমানে গরমের কারণে শ্রমিকেরা ৮ থেকে ১০ ট্রাক লোড দিতে পারছেন।” এদিকে বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের আরেক অংশের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৮৯১) সাধারণ সম্পাদক জানে আলম বলছেন, “মাস খানেক বৃষ্টির দেখা নেই, তাই প্রচণ্ড তাপদাহে শ্রমিকরা কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না। তীব্র গরমের কারণে হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা স্বস্তিতে কাজ করতে পারছেন না।” যশোরের নাভারন ফজিলাতুননেছা সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, “গত বুধবার থেকে জেলায় শুরু হয়েছে তীব্র দাবদাহ। তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে। যা মানুষও প্রাণীদের জন্যে বিপদ সংকেত। বৈরী পরিস্থিতিতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজি বলেন, “প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বাড়ছে যশোরের তাপমাত্রা। এতে বিপাকে পড়েছেন বন্দর শ্রমিকরা। খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো বেলা ১১টার পর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না। “দুপুর থেকে আগুনের হলকা ছাড়ছে প্রকৃতি। এই অবস্থার মধ্যে হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা ট্রাকে পণ্য লোড আনলোডে হিমশিম খাচ্ছে। পণ্য সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।” বন্দরে পণ্যজট কমাতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান। বেনাপোল সিএন্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোলে আসে। বাংলাদেশ থেকে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে যায়। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য খালাস করে ভারতে ফেরত যায়।