সরস্বতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী। পিতা পেশায় কৃষক। থাকতেন খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চল বটিয়াঘাটায়। কিন্তু অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে ফলন উৎপাদন ব্যহত হওয়া, আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া এবং সুপেয় পানির অভাবের কারণে স্বপরিবারে তাদেরকে বটিয়াঘাটা ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে ছাচিবুনিয়ার দিকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী প্রত্যেকটি মানুষের চিত্র এমনই।
সকলেই কোনো না কোনোভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রভাবিত। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে আগামী প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা ছড়াতে এবং ভবিষ্যতে তাদেরকে “ক্লাইমেট লিডার” হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে “প্রজেক্ট উজ্জীবন “। এই প্রজেক্টের উদ্দ্যামী উদ্দ্যোক্তারা হচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের ইমন কাজী ও মো. আকিল খান ,পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের মো. ইশতিয়াক আহমেদ সাজিদ ও জি, এম, রাকীব ,উন্নয়ন অধ্যয়ন ডিসিপ্লিনের আরলিন করিম, মৃত্তিকা, পানি এবং পরিবেশ ডিসিপ্লিনের কিফায়াত আরা রিফা, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সুমাইয়া আক্তার এবং সিয়াম বাবু।
বটিয়াঘাটার সরস্বতী মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের ৪০ জন শিক্ষার্থীকে জলবায়ুর প্রভাব , সচেতনতা ও ঝুঁকি মোকাবেলা সম্পর্কে জানানোর মাধ্যমে শুরু হয় তাদের কাজ ।এরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে জৈব সার তৈরির মাধ্যমে একটি অর্গানিক গার্ডেন তৈরি করা। এবং একই সাথে “থ্রি আর” অর্থাৎ রিডাকশন,রিডিউস ও রিইউস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।যেখানে শিক্ষার্থীরা পুরোনো ও ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে পারে।যেমন ফেলে দেওয়া কাগজের টুকরো দিয়ে কাগজের কলম তৈরি করা, নারকেলের ছোবড়া দিয়ে কলমদানি ,শোপিস ইত্যাদি তৈরি করা হয়।তাদের এই সৃষ্টিশীল কাজগুলোকে জনসম্মুখে আনার জন্য এবং তাদের কাজে উৎসাহ দেওয়া জন্য “অনন্য উদ্ভাবন মেলায়” সেগুলো প্রদর্শিত হয়।শিশুদের এই কাজে যাতে তাদের অভিভাবকরা সমর্থন, সহায়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এজন্য তাদের নিয়ে প্রজেক্ট উজ্জীবনের সদস্যরা “অভিভাবক সম্মেলন”এর আয়োজন করে।যেখানে তাদের সাথে মতবিনিময় করা হয়। এরপর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই ৪০জন শিক্ষার্থী যাতে পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের আরো অসংখ্য শিক্ষার্থীকে জলবায়ু সম্পর্কে সচেতন করতে পারে সেজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় “উজ্জীবন জলবায়ু ক্লাব।যার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে উজ্জীবিত শক্তিতে বাসযোগ্য আগামী তৈরি করা।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে প্রজেক্ট উজ্জীবনের অন্যতম সহ প্রতিষ্ঠাতা মো. ইসতিয়াক আহমেদ সাজিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,” আমাদের প্রজেক্ট উজ্জীবন একটি পরিবেশ বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা। যেখানে আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে অর্থাৎ শিক্ষার্থীদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন করি এবং তাদেরকে ভবিষ্যতের ‘ক্লাইমেট লিডার’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়।আমরা এমন একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই যে পৃথিবী হবে দূষণ মুক্ত, জলবায়ু উদ্বাস্তু মুক্ত।যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শান্তিতে ও নিরাপদে বাঁচতে পারবে।
দেশের তথ্য ডেস্ক –