‘ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম্মের দায়ভার ছাত্রদল বহন করবে না’

28.webp

দেশের তথ্য ডেস্ক –

ছাত্রলীগকে খুনি, ধর্ষক, নারী নির্যাতনকারী, প্রশ্নফাঁসকারী ও মাদকব্যবসায়ী হিসেবে আখ্যায়িতে করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব হাসান। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে খুনি, ধর্ষক, নারী নির্যাতনকারী, প্রশ্নফাঁসকারী, মাদকব্যবসায়ী এবং টেন্ডারবাজদের অভয়ারণ্য। দেশপ্রেমিক মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদকে হত্যা করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। একই সঙ্গে দেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে।

ছাত্রদলসহ কোনো গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের এই দুষ্কর্ম্মের দায়ভার বহন করবে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিয়ে চলমান আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এসব কথা বলেন রাকিব হাসান।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি আরো বলেন, ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাত্রদল অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, ছাত্রলীগের প্রাণঘাতী নির্যাতন থেকে নিস্তার পেতেই বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। শহীদ আবরার ফাহাদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে খুন করার পরে মুষ্টিমেয় দুই একজন বাদে বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যদিও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার অভাবে তারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে।

ছাত্রদল মনে করে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আপাত দৃষ্টিতে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান তার একক দায়ভার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের।
রাকিব আরো বলেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা স্বস্তি এবং নিরাপত্তা লাভ করেছে। কারণ বুয়েটসহ সারা দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ টর্চার সেল গড়ে তুলেছে। শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরে বুয়েটের টর্চার সেলগুলো বন্ধ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি কলেজগুলোর হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেলে নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুমে ছাত্রদের মারধর করার শতাধিক ঘটনা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে ছাত্রদলসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থক কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারে না। ছাত্রদল সমর্থন করার কারণে এযাবৎ পাঁচ শতাধিক ছাত্রকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে পাশবিক নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রড, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক দিয়ে নির্যাতন করার পরে গুরুতর আহত অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রচণ্ড শীতের রাতে ছাত্রলীগের গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হয়ে এস এম হলের হাফিজুর মোল্লা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে এফ রহমান হলের আবু বকর খুন হয়েছে। শুধু বুয়েটের আবরার নয়, গত পনের বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছাত্রলীগের কারণে দুজন নিরীহ শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। এ ছাড়া নিজের ধার দেওয়া ক্যালকুলেটর ফেরত চাইতে গিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের আঘাতে চোখ হারিয়েছে এস এম হলের শিক্ষার্থী এহসান রফিক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের এমন পাশবিক নির্যাতনের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন ছাত্ররাজনীতির আতুড়ঘর এবং গণতন্ত্র চর্চার তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ গত পনের বছর ধরে এককভাবে মধুর ক্যান্টিন দখলে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্র চর্চার কফিনে শেষ পেরেক মেরে দেয়। মধুর ক্যান্টিনে নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদ কায়েম করে বুয়েটে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যাওয়া একটি প্রহসন। এর পেছনে রাজনীতি চর্চার কোনো উদ্দেশ্য নাই। বরং বুয়েটের ক্যান্টিন, মেস, দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেকে টেন্ডারবাজি করতে না পারার হতাশা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ সমর্থক নগণ্য সংখ্যক বিপথগামী বুয়েটের শিক্ষার্থীর সহায়তায় ক্যাম্পাসে পুনরায় লুটপাট এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করার ষড়যন্ত্র করেছে।

তিনি বলেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালু করার পদক্ষেপ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষাার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এখন শঙ্কিত এই কারণে যে, ছাত্রলীগের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে তাদের পড়াশোনা এবং ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের মিছিল- মিটিং, গেস্টরুমে হাজিরা দিতে হবে। তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হবে। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিরাগভাজন হলে হল থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে। বুয়েটের প্রতিটি শিক্ষার্থী আতঙ্কিত কারণ যেকোনো মুহূর্তে তাদের যে কারো জীবনে ছাত্রলীগের নির্যাতনে শহীদ আবরারের মতো মর্মান্তিক পরিণতি নেমে আসতে পারে। ছাত্রলীগের উপস্থিতিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা এবং একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষতির আশঙ্কাকে আমরা অত্যন্ত যৌক্তিক মনে করছি। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

তিনি আরো বলেন, সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলে ছাত্রলীগ বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার যে কথা বলেছে, তা একটি নিষ্ঠুর প্রতারণা। ছাত্ররাজনীতির নামে তারা ক্যাম্পাসে একক দখলদারিত্ব এবং ছাত্র নির্যাতনের টর্চার সেল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস গুলোতে ‘টোটালিটারিয়ান ভায়োলেন্ট এক্টিভিজম’ করছে। ক্যাম্পাসে ভায়োলেন্স এবং টর্চারকে ছাত্ররাজনীতি বলা যায় না। ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হলে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা আবশ্যক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Share this post

PinIt
scroll to top