দেশের তথ্য ডেস্ক –
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাত সাহায্যকর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দাইর আল বালাহ এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় এনজিও ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডাব্লিউসিকে) সাত কর্মী নিহত হন। নিহত কর্মীদের মধ্যে পোল্যান্ডের একজন, যুক্তরাজ্যর তিনজনসহ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিকও ছিলেন।
ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা এবং শেফ জোসে আন্দ্রেস নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘তার কর্মীরা আইডিএফের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।’ এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী ভুলবশত দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ফলে তাদের সাতজন কর্মী নিহত হয়েছেন।’ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এই ঘটনার জন্য ‘আন্তরিক দুঃখ’ প্রকাশ করেছে।
সাহায্যকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের অন্য মিত্ররা ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে তারা। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের সাত মানবিক সহায়তা কর্মীকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। ইসরায়েল সাহায্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট সতর্ক নয় বলে অভিযোগ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি তাকে জানিয়ে দিয়েছেন, ত্রাণকর্মী নিহতের এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এক্সের (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ক্যামেরন লেখেন, ‘ইসরায়েলকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে হবে যে এমন ঘটনা কিভাবে ঘটল। মাঠ পর্যায়ে ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের বড় ধরনের বদল ঘটাতে হবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডাব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেসকে ফোন করে শোক প্রকাশ করেছেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সাহায্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে আরো চাপ দেবে।
বাইডেন ইসরায়েলের তদন্ত দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। গাজায় ত্রাণ বিতরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করা ত্রাণকর্মীদের রক্ষায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি।’ ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কাজ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাইডেন। মার্কিন এই নেতা আরো বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা যেন কম ঘটে তা দেখার জন্য।’
গতকাল মঙ্গলবার ফোনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ‘তিন ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যুতে আমরা আতঙ্কিত। এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ স্বাধীন তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ পৃথক একটি ফোন কলে নেতানিয়াহুর কাছে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লা সিকোরস্কি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের কাছে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সহায়তাকর্মীদের হত্যা করেছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
সোমবারের হামলায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পোল্যান্ড নাগরিক নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল এ ঘটনা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের মৃত্যুর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ। ঘটনার দিন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডাব্লিউসিকে)-এর একটি গাড়িতে হামলা হয়। তখন ওই সাত সাহায্যকর্মী নিহত হন। ডাব্লিউসিকে বলছে, দাইর আল বালার একটি গুদাম থেকে চলে যাওয়ার সময় ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলায় কর্মীরা নিহত হয়েছেন। তারা সমুদ্রপথে গাজায় নেওয়া ১০০ টনের বেশি খাবার ওই গুদামে রেখে আসতে গিয়েছিলেন।