জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) বলেছেন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
শনিবার (২৯ মার্চ) উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও মনিটরিং টিমের তৎপরতা লক্ষ্যে বরিশালে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
আহসান হাবিব বলেন, নির্বাচন একটি টিম ওয়ার্ক। নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই এই টিমের সক্রিয় অংশীদার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচন পেশাদারিত্বের সঙ্গে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় সাফল্যের সঙ্গে সুসম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের নির্বাচন হবে এবং পরবর্তী ধাপে ২৩ মে, ২৯ মে এবং ৫ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মতো প্রতিটি জেলার ৩/৪ ধাপে নির্বাচন পরিচালনা করার উদ্যোগ নেওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের নিজ জনবল দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে। উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে অনড় থাকবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনাররা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করছে। আমি বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় এবং আগামী ২-৩ এপ্রিল খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করব।
জ্যেষ্ঠ এ কমিশনার বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী যত প্রভাবশালী হোক না কেন; নির্বাচনী আইনকানুন শতভাগ মেনে চলতে হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। আগের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচন আরও ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে কমিশন সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। এবারেই প্রথম সব প্রার্থীর জন্য অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কেউ কাউকে প্রার্থী হতে বাধা দিতে পারবে না এবং জোরপূর্বক প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতেও পারবে না। এ কারণে উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
আহসান হাবিব বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রার্থীরা ডিজিটাল প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীরা জনসংযোগ করতে পারবেন। তবে কোনো প্রার্থী পাঁচ জনের বেশি কর্মী ও সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন না এবং জনসংযোগকে কোনোভাবে পথসভা, মিছিল বা জনসভায় রূপান্তর করা যাবে না। আশা করছি নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতায় জড়াবে না। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটলে তাৎক্ষণিক দৃষ্টান্তমূলক অ্যাকশনে যাবে কমিশন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ কার্যক্রমকে আরও উচ্চতর মাত্রায় নিয়ে যেতে চায়। এই কমিশনের মেয়াদকালে যেসব স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেসব নির্বাচনকে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচন কমিশন চায় প্রত্যেকে যার যার দায়িত্ব আইন সঙ্গতভাবে এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করবে। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা দৃষ্টিগোচর হওয়ায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন নির্বাচন এর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটারদেরকে নির্বিঘ্নে, নিরাপদে ও নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ও ভোট দিতে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
ইসি আহসান হাবিব বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার চলমান, আপনাদের কাছে কোনো অবৈধ অস্ত্রের তথ্য থাকলে বা কেউ বহন করলে বা ব্যবহার করলে অবহিত করুন। এছাড়া পোলিং এজেন্টরা যাতে হয়রানির বা নির্যাতনের স্বীকার না হয় সেদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। ভোটার নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে মিডিয়াতে ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে বলবেন। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন প্রতিহত করতে হবে এবং আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রার্থী বা তার সমর্থকদের বাড়িঘর-ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠানের ওপর সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতে হবে। যেসব প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করবে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করার পর তাদেরকে বারবার সতর্ক করা হলে তার পরেও যদি তারা আচরণ বিধি ভঙ্গ করে তাহলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের তথ্য ডেস্ক