বাকপ্রতিবন্ধী সুমাইয়া লেখাপড়া শিখে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায়

1711781850956-1.jpg

বাকপ্রতিবন্ধী সুমাইয়া পারভীন (১৬) পরিবারের সাথে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঝাপালী গ্রামে বসবাস করে। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম একজন দিনমজুর। সুমাইয়ারা ৫ ভাই-বোনের মধ্যে আরও দুই ভাই প্রতিবন্ধী। এ কারণে তাদের সংসারে সমস্যার অন্ত নেই।

পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে সুমাইয়া তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও তার অন্য ভাই বোনেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পার হতে পারেনি। সংসারের তাগিদে ছোট বেলা থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী সুমাইয়াকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে হচ্ছে।

সুমাইয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, লেখাপড়া করতে খুব ভালো লাগে সুমাইয়ার। উত্তরণ যখন তাদের এলাকায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত শিশুদের নিয়ে ব্রীজ স্কুল শুরু করে তখন সুমাইয়া সেখানে ভর্তি হয়। সে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা আয় করে যা আমার হাতে তুলে দেয়। সুমাইয়া এখন কাজ করার পাশাপশি নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, স্থানীয় শিশুসুরক্ষা কমিটির সদস্যরা সুমাইয়ার কর্মমালিকের সাথে কথা বলে তাকে কাজের ফাঁকে ব্রীজ স্কুলে লেখাপড়া চালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুমাইয়া বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সব পড়া মুখে বলতে না পারলেও লিখে দেখাতে পারে।

সে লিখে বোঝায়, আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে, এই বয়সে এভাবে লেখাপড়ার সুযোগ পাবো। আমি আগামীতে ভকেশনাল ট্রেনিং করতে চাই, যাতে স্বাধীনভাবে কোন কাজ করতে পারি এবং আমার পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারি।

সুমাইয়ার মা তারামনি বেগম চান তার মেয়ে অন্য সকল স্বাভাবিক মেয়েদের মত জীবন যাপন করুক। সে এখন কাজের মধ্য দিয়ে ব্রীজ স্কুলে লেখাপড়া করছে। সেখান থেকে খাতা কলমসহ বিভিন্ন উপকরণ পাবার পাশাপাশি লেখাপড়ার ভালোভাবে সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য তিনি উত্তরণ ও এডুকোকে ধন্যবাদ জানান।

উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় কাশিমাড়ী, বুড়িগোয়ালিনি, গাবুরা ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে এডুকো প্রকল্পের বাস্তবায়নে চারটি ব্রিজ স্কুলে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুর শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত ব্রিজ স্কুলে এসে লেখাপড়া করছে। এছাড়া ২০২৩ সালে ৫০ জন প্রশিক্ষাণার্থী ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সুইং মেশিন ও টেইলরিং, ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং এবং ইলেকট্রিক হাউজ ওয়ারিং ও সোলার সিষ্টেম বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ব্যবসাসহ আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছে। বাকপ্রতিবন্ধী সুমাইয়া পারভীনও অন্য ছেলে-মেয়েদের মতো সমানতালে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুল বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

কাশিমাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী আনিছুজ্জামান আনিচ বলেন, উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। বাকপ্রতিবন্ধী সুমাইয়ার মতো অনেকেই এখানে পড়ালেখা শিখতে পারছে।

 

দেশের তথ্য ডেস্ক 

Share this post

PinIt
scroll to top