আজ ২৬ মার্চ মঙ্গলবার বিকাল ৩:৩০ ঘটিকায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী অডিটোরিয়ামে খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব তালুকদার আব্দুল খালেক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ সভাপতিত্ব করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় মেয়র মহোদয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিচারণ করে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর বর্জ্রকণ্ঠে উচ্চারিত বাঙালি জাতির মুক্তির কালজয়ী অমীয় বাণী “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ” কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের তরে প্রাণ উৎসর্গ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করেছিল সে সম্পর্কে গভীরভাবে আলোকপাত করেন।
উক্ত সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার বিশেষ অতিথি কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মহোদয় উপস্থিত সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, “শতাব্দীর মহানায়ক, নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের মার্চ মাসে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি পূর্ব বঙ্গের সকল মানব গোষ্ঠীকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল, মত ও পথ নির্বিশেষে একই বৃত্তে এনে স্বাধীনতার স্বপ্নে দীক্ষিত করেন এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে বাঙালি জাতিকে আজন্ম লালিত স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ এর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ গণ অভ্যুত্থান এবং ৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং জনযুদ্ধে দীক্ষা দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের উত্তাল দিনে রেসকোর্স ময়দান যেটি বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী জাতীয় উদ্যান সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগমে তিনি বাংলার ও বাঙালির স্বাধীনতার কালজয়ী অমর কাব্য উপস্থাপন করেছিলেন। এই স্বাধীনতার অমর কাব্যের ১৮ মিনিটের ঐতিহাসিক ভাষণে ছিল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালি জাতিকে ২৪ বছর ধরে শোষণ, নির্যাতন এবং বঞ্চনার ইতিহাস। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে পরোক্ষভাবে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে কি কি করতে হবে তার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে দিয়েছিলেন। ভাষণে বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার জন্য এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য বলেন। তিনি বলেন রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব, তবুও এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। স্বাধীনতার অমর কবিতার শ্রেষ্ঠ লাইনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমাদেরকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। সর্বশেষে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। যা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্পষ্ট দিক নির্দেশনা। খাজনা, ট্যাক্স সবকিছু বন্ধ করে দেয়াসহ শত্রু সৈন্যরা যেন সহজে দেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন তাঁর এই ভাষণে। অর্থাৎ এই দেশবাসীকে স্বাধীন সার্বভৌম হতে হলে কি কি করতে হবে তার সকল সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল এই বক্তব্যে। এই বাঙালি জাতিকে যে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না এই কথাটি বিশ্ববাসীকে সর্বপ্রথম জানিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ই মার্চের এই ভাষণ যতদিন থাকবে ততদিন এর উপর আরো বেশি বেশি গবেষণা হবে। ৭ই মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ০২ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এই দেশের পতাকা।
আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধু যদি আজ বেঁচে থাকতেন আমাদের এই বাংলাদেশ অনেক আগেই স্বাবলম্বী উন্নত দেশের পথে ধাবিত হতো। আমাদের মাঝে আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই, তবে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী জাতির পিতার সুযোগ্য তনয়া বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ খাতের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বক্তব্যের শেষাংশে পুলিশ কমিশনার মহোদয় বলেন ১৯৭১ সালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আজও সক্রিয় তাদের প্রতিহত করতে কেএমপিসহ বাংলাদেশ পুলিশ সদা প্রস্তুত।” পুলিশ কমিশনার জানান খুলনার জনগণের জানমালের হেফাজত করা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান কর্তব্য। এরপর পুলিশ কমিশনার মহোদয় উপস্থিত সকলকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য সমাপ্ত করেন।
এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) জনাব জয়দেব চৌধুরী, বিপিএম-সেবা; খুলনার জেলা প্রশাসক জনাব খন্দকার ইয়াসির আরেফীন; খুলনা জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, পিপিএম (বার); খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির এবং খুলনা জেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার জনাব সরদার মাহাবুবার রহমান-সহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের তথ্য ডেস্ক