খুলনা নগরীর মীরেরডাঙ্গা এলাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের দুই তলা ভবন নির্মাণ হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না করায় ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে রোগী, তাদের স্বজন ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর। ৫৯ বছর আগে নির্মিত ভবনের ছাদ ধসে যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি। আতঙ্কে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি কমেছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে এখন রোগী ভর্তি থাকেন দিনে ৩৫-৪০ জন। আগে বেশির ভাগ শয্যাতেই রোগী থাকতেন। এ ছাড়া চিকিৎসকসহ অন্য জনবল এবং যন্ত্রপাতি সংকট প্রকট। খুলনা বিভাগের একমাত্র বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এসব সংকট নিরসনে নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ।
জানা গেছে, পুরো খুলনা জেলায় গত বছর যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ১৫ জন। চলতি বছরের প্রায় তিন মাসে ৮২৮ জন যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছেন। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ১০০ জন চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া ভর্তি রোগী থাকেন। কিন্তু হাসপাতালে ওষুধের সংকট রয়েছে। সব ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না। খাবারের মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন রোগীরা। প্যাথলজিক্যাল অনেক পরীক্ষা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করে আনতে হয়।
হাসপাতালে ভর্তি শফিকুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান ও সালেহা বেগম বলেন, ছাদ থেকে মাঝে মধ্যে বড় বড় পলেস্তারা খসে পড়ে। সে কারণে সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। টয়লেটের অবস্থা খুবই খারাপ। বেশির ভাগ শৌচাগারের দরজা নেই। শৌচাগারও পর্যাপ্ত নয়। সব শয্যার ওপর ফ্যান নেই।
নার্সরা জানান, ২০০৯ সালে দেওয়া ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। তিন মাস আগে নতুন একটি এক্স-রে মেশিন দেওয়া হয়েছে। কক্ষ সংস্কার করে সেটি স্থাপনে ছয় লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেই টাকা বরাদ্দ না থাকায় ফেলে রাখা হয়েছে মেশিনটি। এ ছাড়া নার্সদের বসার জন্য পর্যাপ্ত কক্ষ নেই।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, হাসপাতালের ছয়টি আবাসিক ভবনের সবই পরিত্যক্ত। এর ফলে তাদের বাইরে থাকতে হয়। এ ছাড়া সীমানা দেয়াল নিচু হওয়ায় মাদকসেবীরা হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে মাদক সেবন করে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসকের ১১টি পদের মধ্যে পাঁচটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এ ছাড়া অন্য ১৭৩টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৬২টি।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ বিশ্বাস জানান, এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। নেই আইসিইউ এবং সিসিইউ সুবিধা। অপারেশন থিয়েটারও নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন প্রয়োজন হলেও তা নেই। এছাড়া হাসপাতাল ভবনটিও সংস্কারের উপযোগী নেই।
হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল জানান, চার মাস আগে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালে তিনটি ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত বিশ্বাস বলেন, চার তলা হাসপাতাল ভবন, তিন তলা ডক্টর ডরমিটরি এবং তিন তলা নার্সেস কোয়াটার নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও অনুমোদন মেলেনি।
দেশের তথ্য ডেস্ক