সংরক্ষণে থাকা ইভিএম এখন ইসির ‘গলার কাঁটা’

evm-20240321101302.jpg

চট্টগ্রাম ইনডোর স্টেডিয়ামে রাখা দুই হাজারের অধিক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সরাতে বলছে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। তবে গোডাউন ভাড়া না পাওয়া ও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ইভিএম স্থানান্তর করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংরক্ষিত ইভিএমগুলো এখন ইসির গলার কাঁটার মতো আটকে আছে।

এদিকে ইভিএম অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে ইসির কাছে বারবার অনুরোধ করেছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী। তবুও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।

ইসির গত ৯ মার্চের সমন্বয় সভার কার্যবিবরণী থেকে সংরক্ষিত ইভিএমগুলোর বিষয়ে জানা গেছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। সভার কার্যবিবরণী গত ১৯ মার্চ প্রকাশ করে ইসি।

ওই সভায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী ইসিকে জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত ইভিএমগুলোর গোডাউন ভাড়া না পাওয়ায় এ বিষয়ে একাধিকবার সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সংরক্ষিত ইভিএমগুলো চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আবারও অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি জানান, নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ইভিএমগুলোর কিউসি করা হয়। কিউসি করার সময় অপারেটর ও শ্রমিকদের জন্য অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্প বা রাজস্ব খাত থেকে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা জরুরি।

এ বিষয়ে সভায় ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান জানান, ইভিএম শ্রমিকদের মজুরি খাতে প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ আছে। এই খাতে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলো থেকে চাহিদা পাওয়া গেলে অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে ইভিএম সরানোর বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে জানতে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামের ইনডোর স্টেডিয়ামে যে ইভিএমগুলো রাখা আছে, সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে সরাতে হবে। কারণ, ইনডোর স্টেডিয়ামের কর্তৃপক্ষ বারবার ইভিএমগুলো সরানোর জন্য বলছে। আমাদের ইভিএমের কারণে তাদের বিভিন্ন খেলাধুলায় সমস্যা হচ্ছে। সে কারণে আমরা কমিশনকে বারবার ইভিএমগুলো এখান থেকে সরাতে অনুরোধ করছি।’

স্টেডিয়ামে কতগুলো ইভিএম আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে ২ হাজার ৭৭৩টি ইভিএম ছিল। এর মধ্যে ৫৫৫টি ইভিএম কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ২১৮৮টি ইভিএম এখনও চট্টগ্রামের ইনডোর স্টেডিয়ামে সংরক্ষিত আছে। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি জেলা প্রশাসককেও বলেছেন। জেলা প্রশাসক আবার সচিবকে জানিয়েছেন, আমরাও সচিবালয়কে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া ইভিএমগুলো রাখতে গোডাউন ভাড়া পাইনি।’

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে ইভিএম স্থানান্তরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিকল্প জায়গা বের করে ইভিএমগুলো সরানোর ব্যবস্থা করছি। বর্তমানে চট্টগ্রামের ইনডোর স্টেডিয়ামে ইভিএমগুলো রাখা হয়েছে। স্টেডিয়াম থেকে ইভিএমগুলো পাশের অঞ্চলে সরানোর জন্য একটা পরিকল্পনা করেছি।’

তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) নির্বাচন কমিশন সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং ইভিএম প্রকল্প পরিচালককে এই সমস্যা নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে ইভিএমগুলো বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ)-এ নিয়ে আসবো।

তিনি আরও বলেন, ইভিএম এর জন্য গোডাইন ভাড়া করেও রাখা যাচ্ছে না। কারণ, গোডাউন ভাড়ার কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বৃহস্পতিবারের কমিশন সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই ইভিএম নতুন জায়গায় সংরক্ষণ করা হবে।

দেশের তথ্য / আই এইচ

Share this post

PinIt
scroll to top