নামেই চালু হয়েছে দৌলতপুর জুট মিল, কার্যক্রমে দায়সারা ভাব

.jpg

তিন বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু হয়েছে খুলনার দৌলতপুর জুট মিল। মিলটি ৩০ বছরের জন্য ফরচুন গ্রুপের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতের ওই গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনি ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি সেখানে নতুন করে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে মিলটি চলছে দায়সারা। ২৫০টি তাঁতের মধ্যে এখন পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র ২০টি। আগে যেখানে প্রায় ২২০০ শ্রমিক কাজ করত, সেখানে এখন কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ২০০ শ্রমিকের। উৎপাদনও হচ্ছে অনেক কম। ফলে মিলটি কীভাবে লাভজনক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ১ জুলাই খুলনা নগরীর খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত দৌলতপুর জুট মিল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। পরে ৩০ বছরের জন্য মিলটি ফরচুন গ্রুপকে ইজারা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মিলটি তাদের কাছে হস্তান্তর করে বিজেএমসি। ইজারা বাবদ প্রতি বছর ফরচুন গ্রুপ সাড়ে ৯ লাখ টাকা বিজেএমসিকে দেবে। পাঁচ বছর পরপর ১০ শতাংশ করে বাড়ানো হবে ভাড়া। ইজারা নেওয়ার সময় বিজেএমসিকে অগ্রিম সাড়ে তিন কোটি টাকা দিয়েছে ফরচুন গ্রুপ।

দৌলতপুর জুট মিলে তাঁত রয়েছে মোট ৬১০টি। তবে সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকা অবস্থায় ২৫০টি তাঁত ছিল। ইজারা নেওয়ার পর ২৫০টি তাঁতের মধ্যে ১৫০টি সংস্কার করে ফরচুন গ্রুপ। তবে এখন পর্যন্ত চালু করা হয়েছে মাত্র ২০টি। আগে প্রতিদিন ১৯ টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হওয়া মিলে এখন উৎপাদন হচ্ছে দেড়-দুই টন। আগে মিলে সুতা ও পাটের বস্তা তৈরি করা হতো। এখন শুধু বস্তা তৈরি করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকা অবস্থায় মিলটিতে ২ হাজার ২৮২ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। কিন্তু এ পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়েছে মাত্র ২০০ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে তারা চার সপ্তাহের মজুরি বাবদ ১৬-১৭ হাজার টাকা পেতেন। এই মিলে এখন মাসে গড়ে ১০ হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন। এ ছাড়া মিল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয়নি।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, মিলটি এখনও অল্পসংখ্যক তাঁত ও শ্রমিক দিয়ে চালানো হচ্ছে। এর ফলে উৎপাদনও হচ্ছে কম। এত কম পণ্য উৎপাদন করে মিলটি কীভাবে লাভজনক করা হবে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।

মিলের মহাব্যবস্থাপক ইসহাক আলী জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৮০টি তাঁত চালু করা হবে। তখন আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। ২৫০টি তাঁতের মধ্যে ১০০টি আর চালু করার উপযোগী নেই। উৎপাদিত পাটজাত পণ্য ভারত, ঘানা ও তুরস্কে বিক্রি করা হবে। ইতোমধ্যে মিলের চেয়ারম্যান ওইসব দেশের ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। বর্তমানে স্যাকিং বস্তা তৈরি করা হচ্ছে। আগামীতে হোসিয়ান বস্তা বানানো হবে। মিলের একটি শেডে তৈরি করা হবে জুতা। ইতোমধ্যে চীন থেকে যন্ত্রপাতি এনে তা স্থাপনের কাজ চলছে। এ ছাড়া আরেকটি শেড প্রস্তুত করে সেখানে ব্যাগ তৈরি করা হবে। সেখানে আগামী ডিসেম্বরে আরও এক হাজার শ্রমিক নিয়োগ করা হবে।

দেশের তথ্য / জে আর 

 

Share this post

PinIt
scroll to top