অধিনায়ক শান্তর প্রথম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সহজ জয়

shanto_centure.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।। লিটন দাস, সৌম্য সরকারের পর ফিরলেন তাওহীদ হৃদয়ও। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে বাকি কাজটা সেরেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। নিজে সেঞ্চুরি পাওয়ার সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকের সঙ্গে ১৬১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশের ৬ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছেন শান্ত। এর আগে শ্রীলঙ্কাকে ২৫৫ রানে আটকে দেয়ার কাজটা করেছেন তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব এবং শরিফুল ইসলাম।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ২৫৬ রান তাড়ায় ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দিলশান মাদুশঙ্কার গুড লেংথে পড়া ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন লিটন। প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো প্রথম ওয়ানডেতেও ডাক মেরে ফিরলেন ডানহাতি এই ওপেনার। আরেক ওপেনার সৌম্য একেবারে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন।

মাদুশঙ্কার শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন সৌম্য। তবে টপ এজ হয়ে মিড উইকেটে থাকা মাহিশ থিকশানার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। চারে নেমে থিতু হতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়ও। প্রমোদ মাদুশানের গুড লেংথে পড়া ডেলিভারিতে নিজের উইকেট যেন দিয়ে এলেন তিনি। কঠিন কোন ডেলিভারি না হলেও বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তরুণ এই ব্যাটারকে। লেংথে থাকলেও খানিকটা দেরিতে ব্যাট চালানোয় হৃদয়কে ফিরে যেতে হয়েছে ৩ রানে।

লিটন, সৌম্যর পর হৃদয়কে দ্রুতই হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শান্তর সঙ্গে জুটি গড়ে স্বাগতিকদের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। শুরুর বিপর্যয় সামাল দেয়ার সঙ্গে রানও তুলেছেন তারা দুজন। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে ভাঙে তাদের দুজনের ৬৯ রানের জুটি। লাহিরু কুমারার শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৩৭ রান করা মাহমুদউল্লাহ।

অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ফেরার পর মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন শান্ত। সেই সঙ্গে পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখাও। এরপর শান্ত ও মুশফিক মিলে লঙ্কান বোলারদের বিপক্ষে দাপট দেখাতে থাকেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে মুশফিকও পেয়েছেন পঞ্চাশের দেখা। ২০২৩ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পর এবারই প্রথম ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি পেলেন মুশফিক। যা তার ক্যারিয়ারের ৪৯তম হাফ সেঞ্চুরি।

প্রথম দেখেই বাংলাদেশকে টানছিলেন শান্ত। পূর্ণকালীন অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। কুমারার শর্ট বলে চার মেরে ১০৮ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন শান্ত। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে এমন কীর্তি গড়লেন তিনি। সেঞ্চুরির পর মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন টাইগার অধিনায়ক। শান্ত ১২২ এবং মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৭৩ রানে।

এর আগে শান্ত নতুন বল তুলে দিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদকে। তবে শুরুতে তারা খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। যদিও আঁটসাঁট বোলিংয়ে লঙ্কানদের বেশ চাপেই রেখেছিলেন শরিফুল। অন্যদিকে তাসকিন ছিলেন বেশ খরুচে। তবে একটি ওভার মেডেনও নিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশের বোলারদের সামলে নিরাপদে দলীয় পঞ্চাশে পা রাখে শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তানজিম হাসান সাকিব।

অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দেন আভিস্কা ফার্নান্দো। আর তাতেই লঙ্কানদের ৭১ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে। এরপর আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকেও আউট করেছেন সাকিব। এই পেসারের শর্ট বলে পুল করতে গিয়েছিলেন নিশাঙ্কা। বল ব্যাটে আসার খানিক আগেই শট খেলে ফেলেন তিনি। ফলে বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় সৌম্য সরকারের হাতে। ফলে নিশাঙ্কা আউট হয়েছেন ২৮ বলে ৩৬ রান করে। তৃতীয় ওভারে এসে আরেকটি উইকেট তুলে নেন সাকিব। এবার তার শিকার সাদিরা সামারাবিক্রমা।

তার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে মিডউইকেটের দিকে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন সামারাবিক্রমা। ব্যাটে-বলে না হলে বল ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। ডান দিকে ডাইভ দিয়ে দারুণ এক ক্যাচ মুঠোবন্দি করেন মুশফিক। তিন উইকেট পতনের পর শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন চারিথ আসালাঙ্কা ও কুশাল মেন্ডিস। এই দুজনের ৪৪ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা মিরাজের বল মিস করে বোল্ড হয়েছেন ৩৭ বলে ১৮ রান করা আসালাঙ্কা। এরপর একপ্রান্ত আগলে রাখা মেন্ডিস ৬৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আরও ভালো কিছু করার।

অবশ্য তার ইনিংস আর বেশিদূর এগোতে দেননি তাসকিন। এ পেসারের লেংথ বল টেনে মারতে চেয়েছিলেন মেন্ডিস। তবে ব্যাটে-বলে হয়নি। মিড অনে সেই ক্যাচ সহজে নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। ৭৫ বলে মেন্ডিসের ইনিংস থেমেছে ৫৯ রানে। এর ফলে জানিথ লিয়ানাগের সঙ্গে মেন্ডিসের জুটি থেমেছে ৬৯ রানে। আগের ওভারেই শর্ট বল দিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার কাছ থেকে একটি চার ও ছক্কা উপহার পেয়েছিলেন তাসকিন। পরের ওভারে এসে সেই শর্ট বলেই হাসারাঙ্গাকে ব্যক্তিগত ১৩ রানে ফিরিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চলে তাওহীদ হৃদয় সহজ ক্যাচ নিয়েছেন।

তাসকিনের তৃতীয় শিকার হয়েছেন মাহিশ থিকশানা। এই পেসারের শর্ট লেংথে করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লিপে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। এরপর নিজের নবম ওভারে বোলিং করতে এসে ক্র্যাম্পের কারণে কোটা পূরণ না করেই মাঠের বাইরে চলে যান সাকিব। এরপর তার ওভারের বাকি দুই বল করতে আসেন সৌম্য সরকার। একপ্রান্ত আগলে রেখে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া লিয়ানাগেকে ফিরিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের লেংথ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে কাভারের ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন লিয়ানাগে। তবে বল সোজা চলে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে।

ফলে শেষ হয় লিয়ানাগের ২ ছক্কা ও ৩ চারের ৬৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। নিজের শেষ ওভারে এসে শরিফুল আউট করেছেন প্রমোদ মাদুশানকে। শরিফুলের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। দিলশান মাদুশঙ্কাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের ইনিংস ২৫৫ রানে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন শরিফুল। শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে লাফিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন তানজিম সাকিব।

Share this post

PinIt
scroll to top