দেশের তথ্য ডেস্ক।। হামলা-মামলাসহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে।
বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যের নিরাপত্তায় শনিবার (৯ মার্চ) বেলা ৩ টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হল রুমে ভোট গণনা শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর গণনা ছাড়াই সম্পাদক পদে এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি আজ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত এক পত্রে শনিবার বলা হয়, একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার পূর্বেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মস্তান শ্রেণী কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও ইহা অর্থহীন ঘোষণা, তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে তাহা ‘ইগনোর’ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে ভোট গণনা নিয়ে হট্টগোলের পর নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের বলেন, শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন, তাই তাকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলার পর এক আইনজীবীকে গ্রেফতার ও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
গত শুক্রবার ভোরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আক্রমণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন।
যেখানে এই নির্বাচনের স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোাকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, রাতেই এই মামলার আসামি বিএনপি সমর্থিত ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে, গত রাতে নাহিদ সুলতানা যুথীর গুলশানের বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযোগ চালিয়ে কয়েজনকে আটক করে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যপট তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বেলা ৩ টায় ‘দিনের আলোতে’ ভোট গণনা চাচ্ছিলেন।
এ বিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়। শুক্রবার ভোরে মারামারির ঘটনাও ঘটে। যেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে আক্রমণ করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এখানে ‘বহিরাগতের হামলা’ হয়েছে বলে অনেকে দাবী করেন।
একপর্যায়ে গণনা ছাড়াই শুক্রবার সকালে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করে বলেন, শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন, তাই তাকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।
ভোটের ফলাফলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক বলেন, সকাল ৮ টার পর পুলিশের পাহারায় আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি।
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভোটের পর আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলাম। এখনও আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। আমরা এখন ব্যালট বাক্সও খুজে পাচ্ছি না, নির্বাচন কমিশনকেও খুজে পাচ্ছি না।
শুক্রবার সকালে দেখা যায় ভোটের ব্যালট বাক্স সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে পুলিশের পাহারায় রয়েছে। এই প্রাঙ্গণে আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্য ও কয়েকজন সাংবাদিক ছাড়া কোনো দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের দেখা যায়নি।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর শুরু হয়ে মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচনে ১৪ জনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, দুজন সহ-সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, দুজন সহ-সম্পাদক এবং সাত জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৭ হাজার ৮৮৩ জন। আর প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন।