খুলনায় দুই দিনব্যাপী সনাক আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

-প্রদান-করছেন-নির্বাহী-পরিচালক-টিআইবি-scaled.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।। দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকরতা, আইনের কার্যকর প্রয়োগ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা, জনসম্পৃক্ততা এবং অর্থ পাচার রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত নাগরিকদের দুর্নীতিবিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সচেতন নাগরিক
কমিটি (সনাক)’র সদস্যবৃন্দ। ‘দুর্নীতি, দারিদ্র্য, অবিচার: নাগরিক ভাবনা’ শ্লোগান নিয়ে খুলনায় অনুষ্ঠিত সনাক আঞ্চলিক সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যগণ এ দাবি জানান। খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের ১৪টি সনাক’র প্রায় দুইশত সদস্যের উপস্থিতিতে দুই দিনব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী এই আঞ্চলিক সনাক সম্মেলন আজ (২ মার্চ ২০২৪) শেষ হয়েছে। নসনাক সম্মেলনে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সনাক খুলনার সভাপতি অ্যাড. কুদরত—ই—খুদা এবং টিআইবি’র সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ফারহানা ফেরদৌস। সম্মেলনে সনাক খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরা এর প্রতিনিধিগণ ‘দুর্নীতি, দারিদ্র্য, অবিচার ও দুুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন: নাগরিক ভাবনা’ এবং ‘টিআইবি’র চলমান কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন সফল করতে করণীয় বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বেইলি রোডের আগুন এর দুর্ঘটনায় নিহতদের উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ করেন এবং একই সাথে এই দুর্ঘটনাকে দুর্নীতির একটি ফলাফল হিসেবে অবিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতীয় আয় বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে যা আমাদের অর্জন কিন্তু দুর্নীতির কারণে আমাদের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশিত সুফল আমরা ভোগ করতে পারছিনা। দুর্নীতি যদি মাঝামাঝি পর্যায়েও রোধ করা যেত তাহলেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো ৩ শতাংশ বেশী হতে পারতো। টিআইবি’র জাতীয় খানা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অধিকাংশ মানুষই তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় মনে করে ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। সেবা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাঁধে বিত্তশালীদের ঋণের বোঝা, অথচ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বর্তমানে দুর্নীতির একটি চিত্র অর্থ পাচারের ক্ষেত্রেও সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ যে সকল দেশ অর্থ পাচারের শীর্ষে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। যদি অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা যেতো তাহলে বছরে দেশের ১২—১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ রক্ষা করা যেত যা জাতীয় আয়ের ৪ শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না বলে অর্থ পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয় না। ড. ইফতেখারুজ্জামান, জাতির জনকের ২৬ মার্চ ১৯৭৫ এর বক্তব্যের সূত্র ধরে বলেন জাতির পিতা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য ঘরে ঘরে দূর্গ তৈরী করে সামাজিক আন্দোলনের আহবান জানিয়েছিলেন যে অনুপ্রেরণা থেকেই টিআইবি তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আইনের সঠিক
বাস্তবায়ন করে প্রত্যেক দুর্নীতিবাজকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে বাংলাদেশের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

“দুর্নীতি, দারিদ্র্য, অবিচার: নাগরিক ভাবনা” শীর্ষক আলোচনায় সনাক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সনাক ঝিনাইদহের সভাপতি এম সাইফুল মাবুদ, সনাক ফরিদপুরের সহ—সভাপতি পান্না
বালা, সনাক বরিশালের সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন, সনাক কুষ্টিয়ার সভাপতি আসমা
আনসারী মীরু, সনাক খুলনার সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির, সনাক মাদারীপুরের সদস্য প্রফেসর
মকবুল হোসেন, সনাক যশোরের সদস্য অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, সনাক রাজবাড়ীর সভাপতি
প্রফেসর মোঃ নুরুজ্জামান, সনাক বাগেরহাটের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাম কৃষ্ণ বসু, সনাক
পটুয়াখালীর সদস্য মোঃ নূরেজ্জামান খান, সনাক ঝালকাঠির সদস্য শিমুল সুলতানা হেপী, সনাক
বরগুনার সদস্য এডভোকেট মো. আনিসুর রহমান, সনাক পিরোজপুরের সভাপতি এম, এ, রব্বানী
ফিরোজ এবং সনাক সাতক্ষীরার সভাপতি হেনরী সরদার প্রমুখ।

দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা বিষয়ক আলোচনায়
অংশগ্রহণ করেন সনাক সাতক্ষীরার সদস্য প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সনাক পিরোজপুরের সদস্য মো.
মঈনুল আহসান মুন্না, সনাক বরগুনার সভাপতি মনির হোসেন কামাল, সনাক ঝালকাঠির সভাপতি বীর
মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেন গুপ্ত, সনাক পটুয়াখালীর সদস্য অধ্যক্ষ মো: আমিনুল ইসলাম সিরাজ, সনাক
বাগেরহাটের সদস্য প্রফেসর চৌধুরী আব্দুর রব, সনাক রাজবাড়ীর সহ—সভাপতি মুহাম্মদ
সাইফুল্লাহ, সনাক যশোরের সভাপতি অধ্যক্ষ শাহিন ইকবাল, সনাক মাদারীপুরের সদস্য আঞ্জুমান আরা
কবির, সনাক খুলনার সদস্য গৌরাঙ্গ নন্দী, সনাক কুষ্টিয়ার সদস্য মোঃ রফিকুল আলম (টুকু), সনাক
বরিশালের সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী, সনাক ফরিদপুরের সদস্য অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী এবং
সনাক ঝিনাইদহের সদস্য এন.এম. শাহজালাল প্রমুখ। সম্মেলনের এ পর্বে সনাক খুলনার তত্ত্বাবধানে
পরিচালিত অ্যাকটিভ সিটিজেন্স গ্রুপের ০৮ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন যার মধ্যে ৩ জন
তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ও অর্জনসমূহ সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্নীতিমুক্ত, সুশাসিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারীগণ
দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে আরও গতিশীল করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন,
রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকরতা নিশ্চিত
হলেই বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের দুনীর্তিমুক্ত সোনার
বাংলা গড়ার প্রত্যয় পূরণ করা সম্ভব হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top