আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিশেষ করে ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার মাইকেল ফাখরি। তিনি বলেছেন, এই ইচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের খাদ্য অধিকারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার মাইকেল ফাখরি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীর খাবার সরবরাহ নষ্ট করছে এবং অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে খাদ্যসহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। দেশটি গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতের একদম শুরু থেকেই এমনটা করছে।
মাইকেল ফাখরি আরও বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিককে খাদ্য থেকে বঞ্চিত করা যুদ্ধাপরাধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত রোম চুক্তি অনুসারে এটি যুদ্ধাপরাধ। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ সরবরাহে বাধা প্রদানসহ তা বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য রসদ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা’ যুদ্ধাপরাধের শামিল। ইসরায়েল যা করছে তা স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ।
বিশ্বের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ পরিচালনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীকে ক্ষুধার্ত রাখার কৌশল নিয়েছে। দেশটি এই বিষয়কে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও ২০১৮ সালে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ বলে ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা, গাজাবাসীর মাছ ধরার ছোট নৌকা আটক, তাদের বাগানগুলো ধ্বংস করার কোনো কারণই নেই—স্থানীয়দের খাবার থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য ছাড়া। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কেবল ফিলিস্তিনি হওয়ার জন্য ধ্বংস করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে।’
মাইকেল ফাখরি বলেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্টত ‘গণহত্যা’ এবং কেবল কোনো ব্যক্তি বা সরকার নয়, সমগ্র ইসরায়েল এর জন্য ‘অপরাধী’ এবং তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল শুধু বেসামরিক মানুষকেই টার্গেট করছে না, তারা তাদের সন্তানদের ক্ষতি করে ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’
এদিকে, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার (ওসিএইচএ) উপপ্রধান রমেশ রাজাসিংহাম নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির শেষ সময়ে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, গাজার জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ—৫ লাখ ৭৬ হাজার—দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র এক কদম দূরে।’
গাজার খাদ্যসংকটের ফলাফল উল্লেখ করতে গিয়ে রমেশ বলেছেন, গাজার প্রতি ছয়জন শিশুর মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এবং গাজায় ২৩ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য, তা নিতান্তই অপ্রতুল। তিনি বলেন, ‘তার পরও কিছু করা হচ্ছে না। আমরা আশঙ্কা করছি, গাজার দুর্ভিক্ষ এড়ানোর আর কোনো উপায় নেই বললেই চলে এবং এই সংঘর্ষে আরও বহু মানুষ হতাহত হবে।’
রাজাসিংহাম জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাধার কারণে জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো গাজায় ন্যূনতম ত্রাণ সরবরাহ করতে অপ্রতিরোধ্য বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, চলাচল ও যোগাযোগের ওপর বিধিনিষেধ, কঠোর যাচাই-বাছাই পদ্ধতি, যুদ্ধ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও অবিস্ফোরিত অস্ত্র উল্লেখযোগ্য কারণ।