জাপার অন্তবিরোধ:শক্তিশালী রওশন, দুর্বল কাদের!

-কাদের.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক।।  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরু হয়। সেখান থেকে দিনদিন শক্তিশালী হয়ে উঠছেন রওশন এরশাদপন্থিরা। অন্যদিকে, দল থেকে একের পর এক নেতাকে অব্যাহতি দিয়ে ক্রমেই সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মূল অংশ। ফলে আগামীতে ক্ষমতাসীনদের ‘সুদৃষ্টি’ পেলে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশই মূল জাতীয় পার্টিতে পরিণত হবে বলে আশা রওশনপন্থিদের।

জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, নেতার সংখ্যার দিক থেকে এখনো জিএম কাদেরের সঙ্গে রয়ে গেছেন অধিকাংশরা। আর সংসদেও রয়েছে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। কিন্তু সাংগঠনিক দিক থেকে দুর্বল জাতীয় পার্টি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। কারণ রাজধানীতে জাতীয় পার্টির যেকোনো সভা-সমাবেশে লোকবল (ম্যান পাওয়ার) দিয়ে থাকেন দলের কো-চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বাবলা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু। এ দু’জন এখন রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সেলিম ওসমান, পুরান ঢাকার সাইফুদ্দিন মিলন ও কাজী ফিরোজ রশীদ রাজধানীর সভা-সমাবেশে লোকবল দিয়ে থাকেন। এই তিনজনের মধ্যে কাজী ফিরোজ রশীদ রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আর সাইফুদ্দিন মিলন রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ না দিলেও তিনি জিএম কাদেরের প্রতি ক্ষুব্ধ। ফলে এখন লোকবল সমাগম করার মতো জিএম কাদেরের সঙ্গে আছেন একমাত্র সেলিম ওসমান।

জিএম কাদেরের অংশের নেতারা বলছেন, সারাদেশে জাতীয় সাংগঠনিক অবস্থা আগে থেকেই দুর্বল। তার মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতারাও প্রত্যাশা অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা না পাওয়া জিএম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। তারাও এখন রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। ফলে দলের মূল নেতৃত্বে এবং সংসদে জিএম কাদের থাকলেও সাংগঠনিকভাবে তিনি ক্রমেই দুর্বল থেকে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় দলটি আগামীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা এখনই বলা মুশকিল। তবে চলমান অবস্থা অনুধাবন করতে পেরে ইতোমধ্যে রাজধানীতে বিভিন্ন সভা-আলোচনা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন জিএম কাদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, কারা তার (রওশন এরশাদ) সঙ্গে গেল আর না গেল, এটা নিয়ে চিন্তিত নই। তাদের নিয়ে আমার কোনো ভাবনাও নেই।

তিনি বলেন, তাদের (রওশন এরশাদের) সম্মেলন করার এখতিয়ার নেই। সারাদেশের নেতা-কর্মীরা তাদের সঙ্গে থাকলেও তারা সম্মেলন ডাকতে পারেন না। আর এটা তারা করছেন না, একটি পক্ষ তাদের দিয়ে করাচ্ছে। যারা জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করতে চায়।

জিএম কাদের বলেন, সম্মেলন করার একমাত্র এখতিয়ার আমাদের আছে। আর দলের সম্মেলন করার একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা সম্মেলন করবে। এখন তারা সম্মেলন করল না কি অন্য কিছু করল, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জিএম কাদের অংশের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে সরকারের কাছ থেকে জাতীয় পার্টি ২৬টি আসন ছাড় পেলেও মাত্র ১১টি আসনের প্রার্থীরা জয়ী হতে পেরেছে। আমিসহ অন্য প্রার্থীরা জয়ী হতে পারিনি। ফলে যারা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি তারাও নানা কারণে জিএম কাদেরের প্রতি অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে ঢাকার সভা-সমাবেশে যেসব নেতা লোকবল দিয়ে থাকেন তাদের তিনি দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিয়েছেন। এখন সেই সব নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সেই অংশকে শক্তিশালী করছে। তাই এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, ঢাকায় সাংগঠনিক ভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন জিএম কাদের। অন্যদিকে শক্তিশালী হচ্ছেন রওশন এরশাদ।
রওশন এরশাদ অংশের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব সফিকুল ইসলাম সেন্টু সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির সারাদেশে ৭৪টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। তার মধ্যে আমাদের সম্মেলনে ৬০টির বেশি জেলার নেতারা যোগ দেবেন। সেই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি তো ভাগ হচ্ছে না। রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির মূল নেতা। তিনি কিছুদিনের জন্য জিএম কাদেরকে দল পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এখন রওশন এরশাদ পুনরায় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। জিএম কাদের সংসদে থাকবেন। আর রওশন এরশাদ দলের দায়িত্বে থাকবেন। আগামী ৯ মার্চ আপনারা দেখতে পাবেন কারা জিএম কাদেরের সঙ্গে আছেন, আর কারা রওশন এরশাদের সঙ্গে আছেন। তবে একটা চমক থাকবে সেই দিন।
নাম না প্রকাশের শর্তে রওশন এরশাদের অনুসারী এক নেতা বলেন, শুধু দলের নেতা-কর্মী নয়, রওশন এরশাদের পক্ষে আরও অনেকেই আছেন। যারা চায় জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে রওশন এরশাদ থাকুক। আশা করি, আগামীতে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি হবে মূল অংশ। শুধু একটু সময়ের ব্যাপার।
রওশন অংশের সূত্রে জানা গেছে, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে যে জাতীয় পার্টি হতে যাচ্ছে সেখানে তিনি দলের চেয়ারম্যান থাকবেন। আর কাজী ফিরোজ রশীদ অথবা আবুল হোসেন বাবলা মহাসচিব হবেন। এ ছাড়া একজনকে দলের মুখপাত্র করা হবে। অন্যদের প্রত্যেককে সম্মানজনক পদ-পদবি দেওয়া হবে।

Share this post

PinIt
scroll to top