নতুন সংকটে বিএনপি, ব্যর্থতার দায় কার?
দেশের তথ্য ডেস্ক: সরকারবিরোধী আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী হতে পারছে না বিএনপির তৃণমূল নেতারা। কর্মসূচি সফলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ের অভাবও দেখছেন। তাদের মতে, হাইকমান্ডের নাম ব্যবহার করে আন্দোলনকে সঠিক পথে নিতে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নেতা। এছাড়া ভোটের আগে আত্মগোপনে যাওয়া অনেক নেতা এখনো কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না, যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে আবারও নতুন কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে বিএনপি। বিশ্ব ইজতেমা, এসএসসি পরীক্ষা, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে কর্মসূচি নির্ধারণ করবে দলটি। একদফা দাবির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
দলটির একাধিক নেতা জানান, আন্দোলনের এই সময়ে আবার একটি ‘বিশেষ চক্র’ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে নেমেছে। নেতারা জানান, মেয়াদ শেষের আগেই কমিটি ভাঙলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এতে মনোবল হারাবে নেতাকর্মীরা। যার প্রভাব পড়তে পারে সামনের আন্দোলনে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই বিশেষ চক্রটি কী উদ্দেশ্যে বা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এসব করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নেতারা।
এদিকে সতেরো বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছে দলটি। এরই মধ্যে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ আন্দোলনেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। এজন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। যদিও আন্দোলনের অংশ হিসাবে ভোট বর্জনের ডাকে জনগণ সাড়া দিয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলছেন, এটি তাদের বড় সফলতা। তারা আন্দোলন করছেন গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকবেন।
তুণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, একদফার আন্দোলনে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেও মাঠে নামেনি কেন্দ্রীয় নেতারা। অধিকাংশ শীর্ষ নেতা ছিলেন আত্মগোপনে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছিল না কোনো সমন্বয়। তাদের সঠিক সময় দেওয়া হয়নি কোনো বার্তা। একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করলেও দলীয় হাইকমান্ডের বরাত দিয়ে সক্রিয় নেতাদের গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনের ‘ভিত্তিহীন’ বার্তা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এখন অনেকেই মুখ খুলেছেন। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে থেকে অনেক সময় তাদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন। যদিও সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার দায় দেখছেন না বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেফতার হলে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একদফার আন্দোলনে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো সমন্বয় ছিল না, বিষয়টি সঠিক নয়। সরকার এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার মধ্যেও জুমে আমাদের শীর্ষ নেতারা নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কর্মসূচি পালন করেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একাধিক তৃণমূলের নেতা জানান, শীর্ষ নেতাদের অনেকেই শুধু জুম মিটিংয়েই সীমাবদ্ধ ছিলেন। ফলে হরতাল, অবরোধে তৃণমূল কর্মীরা ছাড়া শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি। তবে সঠিক দায়িত্ব উপযুক্ত নেতাকে দেওয়ার মাধ্যমে আন্দোলনে আরও গতিশীল করার কথাও বলেন নেতারা।