দেশের তথ্য ডেস্ক:-
মধ্যবয়সি পরিতোষ ঘোষ ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। কর্মসূত্রে থাকতেন চট্টগ্রামে কয়েকজন সহকর্মীর সাথে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাতে সবার সাথে হাসিখুশি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু তার এই ঘুম আর ভাঙেনি। সকালে সহকর্মীরা অফিসে যাওয়ার জন্য ডাকলে তার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর কারণ সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউর সামনে বিমর্ষ মুখে বসে আছেন মাহতাব আলী। রাতের খাবার খেয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে ঘুমিয়ে পড়েন। প্রতিদিন ফজরের নামাজের সময় স্ত্রী তাকে ডেকে তুলে দিলেও গতকাল তাকে ডাকেননি। সকালে ঘুম ভেঙে দেখেন স্ত্রী অচেতন হয়ে আছেন। ডাকলেও কোনো সাড়া দিচ্ছেন না। আতঙ্কিত হয়ে বাসার সবাইকে ডেকে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন তিনি সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক করেছেন।
রাজধানীর কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় হার্ট অ্যাটাক করা যেসব রোগী আসছেন তাদের বেশির ভাগই কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়া হঠাৎ অচেতন হওয়া রোগী। হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে ডাক্তার তাদের হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি শনাক্ত করেন। রোগতত্ত্বের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হঠাৎ তাপমাত্রায় পরিবর্তন হলে তার প্রভাব পড়ে হূদযন্ত্রের ওপরও। শীতের মৌসুমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ছাড়াও হার্টের অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত হন অনেকে। যা গরমকালের চেয়ে প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি। শীতকালে রক্তনালিগুলোর সংকুচিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে ‘ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন’। আর এমনটা হলে কোনো কারণ ছাড়াই রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। হূদযন্ত্র দ্বিগুণ জোরে কাজ করা শুরু করে। বাইরের তাপমাত্রা অনেকটা কমলে, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে অসুবিধা হয়। এর ফলে হূদযন্ত্র রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হয়। তা ছাড়া, শীতে শরীরের অক্সিজেনের প্রয়োজন বেড়ে যায়। ভ্যাসোকনস্ট্রিকশনের জন্য এমনিতেই রক্তনালি সরু হয়ে যায়। তাই হূদযন্ত্রে কম অক্সিজেন পৌঁছায়। এতে বেড়ে যায় হূদ?রোগের ঝুঁকি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বে ১৯ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত হূদরোগে মৃত্যুবরণ করে। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হূদরোগে মারা যায় তামাকজনিত কারণে। অর্থাৎ প্রতি দুই মিনিটে একজন মানুষ মারা যাচ্ছে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
শীতকালে সাইলেন্ট অ্যাটাক বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সাউথ এশিয়ান হার্ট ফাউন্ডেশনের ফেলো অধ্যাপক ডা. মোহিত চৌধুরী বলেন, মানুষের শরীরে করোনারি আর্টারি নামে ধমনী পুষ্টি জোগায় হূৎপিণ্ডে। মেদ ও কোলেস্টেরল জমে করোনারি আর্টারির এক বা একাধিক জায়গায় ব্লক হলে রক্তপ্রবাহ কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওই হূদপেশী ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এটি বলা হয় হার্ট অ্যাটাক। বিভিন্ন বয়সেই এটি হতে পারে। তবে শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
কারণ শীতের সময় শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য হূৎপিণ্ডকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। হূদযন্ত্র দুর্বল থাকলে বেশি পরিশ্রম করতে গিয়ে সমস্যা হয়। তখন শরীর ঠাণ্ডা হয়ে দেখা দিতে পারে হাইপোথার্মিয়া। এর ফলে হূদপেশীর ক্ষতি হয় যা থেকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। তা ছাড়া আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন ব্যক্তি, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগী, ধূমপায়ী ও যারা কায়িক পরিশ্রম করেন না তাদেরও ঝুঁকি রয়েছে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের।