বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা, কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ

corona.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

করোনা ভাইরাসের নতুন একটি সাবভ্যারিয়েন্ট ‘জেএন.১’ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুততার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বহু দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান মিলেছে। তবে এতে জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকির পরিমাণ কম।

গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়ে বলে, জেএন.ওয়ান সাব-ভ্যারিয়েন্ট ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে পাওয়া গেছে।

এই মুহূর্তে জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি কম এবং বর্তমান টিকাগুলো এর প্রতিরোধে কাজে আসবে উল্লেখ করে ডব্লিউএইচও বলেছে, তবে শীতে করোনা ও অন্যান্য সংক্রমণ ব্যাধি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে।

সংস্থাটি আরও জানায় যে তারা জেএন.ওয়ানসহ ওমিক্রনের অন্যান্য সাব-ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জেএন.ওয়ান পৃথিবীর অনেক দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, তবে এখনো আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসিপি) জানিয়েছে, জেএন.ওয়ান এখন যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির মোট সংক্রমণের মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ শতাংশ এই সাব-ভ্যারিয়েন্টের কারণে হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি বলেছে, বর্তমানে গবেষণাগারে মোট করোনা পরীক্ষার প্রায় সাত শতাংশে জেএন.ওয়ান পাওয়া গেছে।

এটি ছাড়াও অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সংক্রমণ রোধ এবং ভয়াবহ আক্রমণের ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। তা হলো- জনবহুল এলাকাগুলোতে মাস্ক পরতে হবে, হাঁচি-কাশির সময় মুখ বন্ধ রাখতে হবে, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, নিয়মিত হাত পরিষ্কার করতে হবে, কোভিড ও ফ্লু টীকা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট খবর রাখতে হবে, অসুস্থ হলে বাসায় থাকতে হবে এবং লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে হবে।

দেড় বছর আগে ভারতে দেখা দেয় ওমিক্রন ওয়েভ। তারপর এই ভাইরাসের আবির্ভাবে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন প্রথম সারির দু’জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তারা বলেছেন নতুন শনাক্ত করা জেএন.১ হলো ওমিক্রনেরই সাব ভ্যারিয়েন্ট। এতে ভারতে কোভিড-১৯ এর একটি ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।

ওই দুই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী ড. সৌম্য স্বামীনাথান ও ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন কোভিড টাস্ক ফোর্সের কো-চেয়ারম্যান ড. রাজিব জয়াদেভান।

এনডিটিভিকে বুধবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তারা বলেছেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতায় আক্রান্ত সব রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে তার মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই কোভিড পজেটিভ। তারা কোচির অধিবাসী। তারা বলেছেন, কমিউনিটির মধ্যে কোভিড আক্রান্তের বিস্তার ঘটছে। আশপাশের অনেকের দেহে কোভিড পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভাইরাসটির নতুন সাবভ্যারিয়েন্টে জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি নিম্নস্তরের এবং বর্তমানে যে টীকা আছে তাতেই সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু এই শীতে কোভিড ও অন্যান্য সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করেছেন তারা।

অনলাইন বিবিসি বলছে- ফ্লু, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) এবং শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার মতো ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তর গোলার্ধে। যে ভাইরাস কোভিড সৃষ্টি করছে তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহতভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই তা নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম দিচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য বিশ্বে প্রাধান্য বিস্তার করেছে ওমিক্রন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জেএন.১ সাব ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অতি দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া ভ্যারিয়েন্ট এটি। এতে শতকরা ১৫ থেকে ২৯ ভাগ সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্সি বলেছে, ল্যাবে পরীক্ষায় বর্তমানে শতকরা প্রায় ৭ ভাগ মানুষের শরীরে কোভিড পজেটিভ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে এই ভ্যারিয়েন্টসহ অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিষয়ে অব্যাহতভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। শীতে এই ভ্যারিয়েন্টটি দ্রুততার সঙ্গে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিএ.২.৮৬ ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় স্পাইক প্রোটিনে নতুন করে বিবর্তন দেখা দিচ্ছে।

এ অবস্থায় ড. সৌম্য স্বামীনাথান পরামর্শ দিয়েছেন কোভিডকে একটি সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত রোগ হিসেবে এড়িয়ে না যাওয়ার জন্য। কারণ, মাঝে মাঝেই মানুষ এই ভাইরাসে মারাত্মক অসুস্থ হন। অনেক সময় এই রোগ থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে হার্টএটাক, স্ট্রোক এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়। ভারতীয় ওই দুই বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেছেন, জেএন.১ অধিক সংক্রমণযোগ্য। তবে এতে আক্রান্ত হলে উচ্চ হারে মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। কারণ, ভারতে উচ্চ মাত্রায় টীকা দেয়া হয়েছে।

Share this post

PinIt
scroll to top