দেশের তথ্য ডেস্ক:-
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি, দীলিপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), রেজাউল রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বিএসডি) ও তরিকত ফেডারেশনের নেতৃত্বাধীন সমমনা ১৪টি দল মিলে গঠিত হয় কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট। জোটে বিভিন্ন সময় মতবিরোধ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও আদর্শিক কারণে অটুট রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই জোট। এতে এবার আসন ভাগাভাগি নিয়ে বেশ অসন্তোষ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই জোটের অভ্যন্তরে। ১৪ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া রয়েছে ১৩টি দল। আর এই ১৩ দলের মধ্যে মাত্র তিনটি দলকে ছয়টি আসন ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। ছেড়ে দেয়া এই আসনে জোট শরিকরা লড়বেন; তবে প্রতীক কিন্তু নৌকাই থাকছে। জোট শরিকরা নিজেদের প্রতীক ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকবে।
নানা নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি ট্রেনে থেকে গেলো ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মিত্র বলে পরিচিত জাতীয় পার্টি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে— এমন গুঞ্জন ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্তু সেই গুঞ্জন গুঞ্জনই থেকে গেলো; বাস্তবে রূপ নেয়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী প্রার্থীদের মধ্যে ২৬টি আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিকদের এবার মাত্র ছয়টি আসন ছেড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ওই ছয় আসন পেয়েছে মাত্র তিনটি দল। বাকি ১০ দলের কাউকে আসন ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে গতকাল রোববার মিত্রদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে ১৪ দলীয় জোটের বাকি ১০টি দলই কোনো আসন ভাগে পায়নি। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এই শরিকদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি। ফলে এদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ এসব শরিক মনে করছে, দীর্ঘদিনের রাজপথের সঙ্গীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ অবিচার করেছে, অন্যায় করেছে।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। গতকাল ১৪ দলের আসন সমঝোতায় তিনি বাদ পড়েন। তার দলের কোনো প্রার্থীকে আসন ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। ফলে শেষ দিনে এসে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দিলীপ বড়ুয়ার পক্ষে তার প্রতিনিধি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। গতকাল সন্ধ্যায় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ কোনো আসন ছাড় না দেয়ায় তিনি নির্বাচন করছেন না। তবে তার দল থেকে চারজন ভোটে আছেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা কমরেড রেজাউর রশিদ খান খাজা দলীয় প্রতীকে ভোট করবেন। তিনি ছাড়াও তার দলের আরও দুজন ভোটে আছেন। ১৪ দলের আসন ভাগাভাগিতে তার দলকে কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি, অর্থাৎ আসন ছাড় না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে। তিনি এও বলেন, আমরা তো আসন ভাগাভাগির রাজনীতি করি না, আদর্শিক রাজনীতি করি; সে কারণে আসন ছাড় না দিলেও আমরা জোটে আছি।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী রাজনীতির মাঠে আলোচিত ব্যক্তি। ভোটের মাঠে প্রভাব না থাকলেও মামলা করে রাজনীতিতে তিনি সব সময়ই আলোচনা থাকার চেষ্টা করেন। ১৪ দলের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রাম-২ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন টানা দুবার। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ তাকে আসন না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আসন ছাড় না দিয়ে আওয়ামী লীগ তার ওপর অন্যায় করেছে, অবিচার করেছে। তবে তার দল আদর্শিক কারণে এখনও জোটে রয়েছে বলে জানান। তিনি এও জানান, আওয়ামী লীগ আসন ছাড় না দিলেও তার নিজের আসনসহ ৪২টি আসনে তার দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয় প্রতীক ‘ফুলের মালা’ নিয়ে তারা মাঠে থাকবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি মাঠে আছেন।
২৬৩ আসনে লড়বে আওয়ামী লীগ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৩টি সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। গতকাল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে পাঁচটি আসন ইসির বাছাইয়ে বাতিল হয়ে গেছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য ২৬টি এবং ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য ছয়টি আসন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় পার্টিকে ২৬ ও শরিকদের ছয়টি আসন ছাড়ল আ.লীগ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য ২৬টি এবং ১৪ দলীয় জোট শরিকদের জন্য ছয়টি সংসদীয় আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। গতকাল নির্বাচন কমিশনে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জাপার সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনগুলো হলো : ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-১ ও ৩, কুড়িগ্রাম-১ ও ২, গাইবান্ধা-১ ও ২, বগুড়া-২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-৩, পিরোজপুর-৩, ময়মনসিংহ-৫ ও ৮, কিশোরগঞ্জ-৩, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ফেনী-৩, চট্টগ্রাম-৫ ও ৮, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। এই আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনগুলো হলো : বগুড়া-৪, রাজশাহী-২, কুষ্টিয়া-২, বরিশাল-২, পিরোজপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৪। এসব আসন থেকেও দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ।