আইএমএফের ঋণের ৬৮ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী

ortho.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে মঙ্গলবার সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমোদিত ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। এ দফার কিস্তির পরিমাণ ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল রাতে বলেন, আইএমএফের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর গতকালই দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টে (হিসাবে) ঢুকেছে।

বাংলাদেশ এ দফায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়, ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে এ অর্থ। আইএমএফ পর্ষদ ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করার দুদিন পর গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির অর্থ ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়ার চিঠিতে বলা হয়েছিল, এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম)। তাই জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট-সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।

বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)—এই তিন আলাদা ভাগে আসবে আইএমএফের ঋণ। তবে সংস্থাটি ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে ধাপে ধাপে ৩৮টি শর্ত পূরণের অঙ্গীকারের বিনিময়ে।

ঋণ পাওয়ার মূল শর্তগুলো হচ্ছে ব্যাংকঋণের সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া অর্থাৎ একটিই দাম রাখা, নির্দিষ্ট মাত্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সব সময় সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ সংগ্রহ কমিয়ে আনা ইত্যাদি।

সময়ভিত্তিক শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ অক্টোবর আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি মিশন ঢাকায় আসে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বৈঠক করে এ মিশন। মিশনটি আসে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে প্রথম পর্যালোচনা বৈঠক করতে।

বৈঠক শেষে আইএমএফের দল দেখতে পায় যে রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। যেমন গত জুন শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। কিন্তু ওই সময়ে তা ছিল ২ হাজার ৪৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনের পর শুধু রিজার্ভ নয়, রাজস্ব আয় অর্জনের শর্তও পূরণ করা সম্ভব হবে।

মিশনটি চলে যাওয়ার সময় ১৯ অক্টোবর এক বিবৃতিতে জানায়, বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আইএমএফ মোটামুটি একমত হয়েছে। তবে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ থেকেই। সেই সিদ্ধান্তই গতকাল হয়েছে।

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দ্বিতীয় কিস্তির পর আগামী মার্চে আইএমএফের মিশন আসবে ডিসেম্বরভিত্তিক শর্ত পূরণে বাংলাদেশ কতটা ভালো করল, তা দেখতে। তখন তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার আলোচনাও শুরু হবে।

সরকারি হিসাবে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ফেরত না আসা ঋণ, উন্নয়ন প্রকল্পের ফেরত না আসা রিজার্ভ ঋণ ইত্যাদি মিলিয়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২ হাজার ৫১৬ কোটি ডলার। এর বাইরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু রিজার্ভ আছে বিদেশি বন্ড, স্বর্ণ বা বিদেশি ঋণ ইত্যাদি হিসেবে, যা তাৎক্ষণিক খরচ করা যায় না।

Share this post

PinIt
scroll to top