পাইকগাছায় প্রতিমার রং তুলি সাজ সজ্জার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছে মৃৎ শিল্পীরা

durga.jpg

শাহরিয়ার কবির, নিজস্ব প্রতিবেদক//

আগামী ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহত অনুষ্ঠান শারদীয় দূর্গাউৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে

খুলনার পাইকগাছায় শেষ মুহুর্তে প্রতিমার রং তুলি সাজ সজ্জা ও নজর কাড়া প্যান্ডেল তৈরি কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছে মৃৎ শিল্পী ও কারিগররা। এ বছর পাইকগাছা পৌরসভা ও দশ টি ইউনিয়নে ১৫৫ টি পূজা মন্দিরে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পৌর সভায় ৬টি, হরিঢালী ইউনিয়নে ১৯ টি কপিলমুনী ইউনিয়নে ১৯ টি, লতা ১৪ টি সোলাদানা ইউনিয়নে ১২ টি, গদাইপুর ইউনিয়নে ৫ টি, রাড়ুলী ইউনিয়নে ২২ টি, চাঁদখালী ইউনিয়নে ১৩ টি, গড়ুইখালী ইউনিয়নে ১৩ টিসহ মোট ১৫৫ টি মন্দিরে শ্বারদীয় দূর্গাৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ও দূর্গা উৎসব পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলার কপিলমুনি মিলন মন্দির প্রগতি সংঘের আয়োজক কমিটি। কপিলমুনি তথা দক্ষিণ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দূর্গা প্রতিমা প্রদর্শনের আয়োজন করেছে তারা। পাশাপাশি দূর্গাপুজাকে ঘিরে বিনোদ স্মরণে নানা আয়োজন রয়েছে এবারের পুজায়। এখানে বিনোদের ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে তার শৈশব, শিক্ষা জীবন, ব্যবসা জীবনসহ বিনোদ থেকে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুতে পরিণত হওয়া ও তার কীর্তিকার্য সমূহ। ভাস্কর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে রায় সাহেব বিনোদ বিহারীর সাধু জীবন পরিক্রমার চিত্র নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ আয়োজনে। অত্যান্ত দৃঢ়তার সাথে কপিলমুনি বিনোদগঞ্জ প্রতিষ্ঠাতা দানবীর স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর জীবন চিত্র তুলে ধরার মতো মহতী কাজ হাতে নিয়েছে তারা। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে মিলন মন্দির সার্ব্বজনীন কেন্দ্রীয় দূর্গাপূজা মন্দিরে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শারদীয় মায়ের প্রতিমা। যেটা ধারণা করাযায় দক্ষিণ খুলনা জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিমা হতে পারে এটা। আগামী শুক্রবার (২০ শে অক্টোবর) মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হবে। সূচনা পর্বে সন্ধ্যা ৬ টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন ও চণ্ডীপাঠ। সন্ধ্যা ৭ টায় শ্রীমদ্ভভগবত গীতার শ্লোক স্তব। শনিবার (২১ অক্টোবর) মহাসপ্তমী। এদিন সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, গান ও নৃত্যানুষ্ঠান। রবিবার (২২ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী লগ্নে রাত্র ৭.৩০ মিনিটে জাদু প্রদর্শনী। এ অনুষ্ঠানে জাদু প্রদর্শন করবেন জোনাকী যাদু চক্রের অন্যতম খ্যাতিমান জাদু সূর্য ও যাদুজগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাদুকর পি.সি.সাহা। একই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সাতক্ষীরা সংগীত একাডেমীর শিল্পী গোষ্ঠী। সোমবার (২৩ শে অক্টোবর) মহানবমী পুজা অন্তে রাত্রিকালীন সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশন করবেন সাতক্ষীরা সংগীত একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ। একই আয়োজনে রাত্র ৯ টায় “নবরূপে মহা দুর্গা ” পরিবেশন করবেন দক্ষিণবঙ্গের খ্যাতিনামা লাইব্রেরী মামুদকাটী অনির্বাণ শিল্প গোষ্ঠী। মঙ্গলবার (২৪ শে অক্টোবর) মহাদশমী পুজা পরবর্তী দূর্গা মায়ের বির্সজনের মধ্যে দিয়ে এ অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটবে। এ ব্যাপারে সরেজমিনে প্রদর্শনকালে কথা হয় মিলন মন্দির সংঘের মূখপাত্র বিপ্লব সাধুর সাথে। এসময় দূর্গাপুজার সার্বিক আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূর্গামায়ের প্রতিমা প্রদর্শন ছাড়াও একটু ব্যাতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে কপিলমুনি তথা বিনোদগঞ্জ প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর জীবন বৈচিত্র্য ভাস্কর্য প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। ১৮৯০ সালের ২০ শে মে খুলনা জেলার কপিলমুনিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম যাদব চন্দ্র সাধু ও মাতার নাম সহচরী দেবী। তারা ছিলেন চার ভাই এবং তিন বোন। পুত্র সন্তানদের মধ্যে বিনোদ তৃতীয় ছিলেন। বিনোদের প্রথম ভাস্কর্যটির মাধ্যমে আমরা তার শৈশবের একটি খন্ড চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বাবা ও মায়ের সাথে খেলার ছলে আছেন আমাদের বিনোদ। তিনি ছিলেন এ জনপদের অন্যতম শিক্ষা অনুরাগী। কপিলমুনি থেকে তিনি প্রতিদিন প্রায় সাত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ও কপোতাক্ষ নদ পেরিয়ে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় প্রতিষ্ঠিত রাড়ুলী আর.কে.বি.কে হরিশচন্দ্র ইনস্টিটিউটে অধ্যায়ন করতেন। তিনি স্যার পিসির রায়ের আশীর্বাদ পুষ্ঠ শিক্ষার্থী ছিলেন। বিনোদের দ্বিতীয় ভাস্কর্যটির মাধ্যমে আমরা তার শিক্ষাজীবনের একটি খন্ড চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। স্যার পিসি রায়কে প্রণাম করছেন আমাদের বিনোদ। শৈশব থেকে বিনোদ তার বাবার হাত ধরে ব্যবসা জীবনে পদার্পণ করেন। ব্যবসায়ীক দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে গিয়ে ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জনে তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। এরই মধ্য অন্যতম হলো, কেরোসিনের ব্যবসাতে গিয়ে তৎকালীন সময়ে ক্রেতাদের হারিকেন ও কুপির জন্য বিনামূল্যে সলতে বিতরণ করতেন।এমন বিভিন্ন প্রকার দূরদর্শিতার মাধ্যমে তিনি ব্যবসা জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। বিনোদের তৃতীয় ভাস্কর্যটির মাধ্যমে আমরা তার ব্যবসায়ীক জীবনের একটি খন্ড চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেখানে রয়েছে কেরোসিন বিক্রিরত অবস্থায় বিনোদ এবং দু’জন ক্রেতা। বিনোদ ছিলেন কপিলেশ্বরী মায়ের আশীর্বাদ পুষ্ট। আধুনিক কপিলমুনি তথা বিনোদগঞ্জ উন্নয়নের রূপকার ছিলেন বিনোদ। এ অঞ্চলের উন্নয়নের ধারায় বিনোদের মাথায় ছিল কপিলেশ্বরী মায়ের আশীর্বাদী হাত। জনশ্রুতি আছে যে, কপিলেশ্বরী মা শাঁখা পরিধান করেন শাঁখারির নিকট হতে বিনোদের কন্যা রূপে। চতুর্থ ভাস্কর্যটিতে আমরা শাঁখারির হাত থেকে কপিলেশ্বরী মায়ের শাঁখা পরা এবং পিতা রূপে বিনোদকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এছাড়া বিনোদের কীর্তি সমূহ উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির, সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক,

অমৃতময়ী মিলনায়তন, ভরত চন্দ্র হাসপাতাল, বেদ মন্দির, কপিলেশ্বরী মায়ের মন্দির পূর্ণনির্মাণ, সহচরী সরোবরসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম এক্সরে মেশিন ও প্রথম বৈদ্যুতিক জেনারেটর স্থাপন করেন কপিলমুনিতে। বিনোদের পঞ্চম ভাস্কর্যটিতে তার সকল উন্নয়ন মূলক কাজের চিত্র প্রদর্শিত করা হয়েছে।

Share this post

PinIt
scroll to top