দেশের তথ্য ডেস্ক:-
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে বাংলাদেশে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। রোববার দলটি বৈঠক করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে দলটি।
দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করছে। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং তাদের সহায়তাকারীরা শনিবার বাংলাদেশে পৌঁছায়। গতকাল রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা জানতে চেয়েছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ কী কী কাজ করেছে। বৈঠকে এ বিষয়ে তারা কোনো মতামত দেননি। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তারা এটাও বলেন, বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র বিভিন্ন ধরনের। সফরে আসা সবাই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেক সংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করবে। আমরা নিদর্শন দেখাতে চাই, বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। এ জন্য সবার অংশগ্রহণ দরকার। অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার, তা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের বলা হয়েছে, কেউ কেউ ভোট বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে। সরকার চায় সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সরকার ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর চায়।
ড. মোমেন বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা সরকার দিয়েছে। তবে সহিংসতামুক্ত নির্বাচন হবে কিনা, তার নিশ্চয়তা সরকারের কাছে নেই। এ জন্য দরকার সব দলের ঐকমত্য ও আন্তরিকতা। আমাদের এখানে নির্বাচন হলেই বেশ সংঘাত হয়। এগুলো পর্যবেক্ষক দলকে জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, সফরে এসেছে নির্বাচনের বিষয়ে কী কাজকর্ম আমরা করেছি। তাদের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের বলেছি, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই। পর্যবেক্ষক দল কোনো পরামর্শ দিয়েছে কিনা– উত্তরে তিনি বলেন, কোনো পরামর্শ দেয়নি। কী ধরনের সহযোগিতা পর্যবেক্ষক দলের কাছে চাওয়া হয়েছে– জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার যে উন্নয়ন করেছে, তার একটি বই দিয়েছি। বইটি দেখে বলেছে, কেউ তোমাদের কর্মযজ্ঞ থেকে বেশি কিছু করতে পারবে না। অন্যান্য দেশে প্রার্থীরা বিতর্কের একটি সুযোগ পায়। আমাদের দেশে বিতর্ক হয় না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে উৎসাহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনে কে এলো না-এলো, তা এখানে প্রযোজ্য নয়। জনগণ অংশ নিলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক।
যুক্তরাষ্ট্রের আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে কিনা– জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একজনও বলেননি যে নিষেধাজ্ঞা আসবে। এগুলো আপনারা (সাংবাদিকরা) বানান। যুক্তরাষ্ট্র চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর চেয়ে বেশি কেউ কিছু চায়নি। তারা কখনও বলেনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। এমনকি অংশগ্রহণমূলকের কথাও বলেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আজ সোমবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রতিনিধি দলটির বৈঠক হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের। ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফর করবে। সফর শেষ হলে প্রতিনিধি দলটি একটি বিবৃতিও দেবে। নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ এবং সুপারিশ থাকলে তাতে তা উল্লেখ করবে।
বদিউল আলম মজুমদারের বৈঠক
গতকাল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, তাদের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েই কথা হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক রকম অভিযোগ আছে। আমাদের একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দরকার। প্রতি পাঁচ বছর পরপর আমরা এই সমস্যার সম্মুখীন হই। ৫২ বছরেও আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পদ্ধতি বের করতে পারিনি। তিনি বলেন, আমি আশা করব, আমাদের রাজনীতিবিদরা সংলাপে বসে সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধান বের করবেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে কিছু পূর্বশর্ত মানতে হবে। নির্বাচন এক দিনের বিষয় না। দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি। যার অনেক ধাপ আছে, যেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। কারসাজিমুক্ত হতে হবে। গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ হতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করবে কতগুলো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আছে– নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যম। এগুলোর মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। আমাদের নির্বাচন কমিশন কী বলে আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন বলতে আমরা বুঝি চয়েস। বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। বিকল্পই যদি না থাকে, তবে নির্বাচন কী করে হয়? নির্বাচন কমিশন নিজেরাই বলে তারা বিতর্কিত। তারা একটার পর একটা বিতর্কিত কাজ করেই যাচ্ছে। সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া দুটি দল নিয়েও বিতর্ক আছে। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে রাঘব বোয়ালদের ছাড় দিয়েছে তারা।