দেশের তথ্য ডেস্ক:-
গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই অনেক স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন সোমা আক্তার (২৬)। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ওই সন্তানকে কীভাবে পরিচর্যা করবেন। কোন স্কুলে পড়াবেন, অনেক বড় করে তুলবেন এইসব নিয়ে ভাবনার শেষ ছিল না তার। ওই স্বপ্ন আর ভাবনার কথা তার স্বামীকে বলতেন।
আট দিন আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাসপাতালে স্বপ্নের সেই শিশুটির জন্ম দেন। নিজেই শিশুটির নাম রাখেন ওয়াজিহা নূর। কিন্তু স্বপ্ন রেখে নিজেই হারিয়ে গেলেন সোমা।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সোমা আক্তার গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা গ্রামের আল আমিনের স্ত্রী। সোমা আক্তারের সাত বছরের আরো এক মেয়ে রয়েছে। তার নাম আবিদা বিনতে আনিসা। সে ওই গ্রামের শামসুদ্দিন মাস্টার অ্যাকাডেমির দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সোমা আক্তারের দেবর ইকবাল হোসেন সবুজ জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা ল্যাবএইড হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক কন্যাশিশুর জন্ম দেন তার ভাবি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন তারা। ওইদিন রাত থেকেই তার ভাবির জ্বর। এরপর থেকেই ওষুধে জ্বর কমানোর চেষ্টা করেন। অবস্থার অবনতি হতে থাকলে বুধবার সকালে তার ভাবিকে আবার মাওনা ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা দেন। পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুপুরে তাকে (সোমা) ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান।
প্রতিবেশী আবু জাফর জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সোমা আক্তারের জানাজা সম্পন্ন হয়। আট দিনের শিশু রেখে মায়ের মৃত্যুর ঘটনাটি তাদের কাঁদিয়েছে।
সোমা আক্তারের আরেক দেবর তারিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, হাসপাতালে থেকেই তার ভাবি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। ওই হাসপাতালে এখানে-সেখানে ছিল জমা পানি, ছিল এডিস মশা প্রজননের পরিবেশ। তবে আট দিনের কন্যাশিশুটি সুস্থ রয়েছে।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার। বড় মেয়ে আনিসাকে জড়িয়ে ধরে নিজেই ফুঁপিয়ে কাঁদছেন আল আমিন। এরপরও বড় মেয়ের মাথায় চুমো দিয়ে বারবারই বলছেন, ‘শক্ত হও মা। মায়ের জন্য দোয়া করো। আল্লাহ যেন তোমার মাকে বেহেস্ত নসিব করেন।’ দুই হাত দিয়ে বড় মেয়েটির চোখের অশ্রু মুছিয়ে দেওয়ার সময় তার নিজের দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল।
স্বজনরা জানায়, আট দিনের শিশুটি এখন তার নানির কাছে রয়েছে। ওই গ্রামেই শিশুটির নানাবাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, শিশুটির নানা-নানি কাঁদছে। কখনো শিশুটিকে নানি, কখনো-বা নানা কোলে তুলে নিচ্ছেন। কোলে নিয়ে শিশুটির নানি হিরামনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘আল্লাহ গো! এ কী অইলো!’
সোমা আক্তারের স্বামী আল আমিন জানান, শিশুটি গর্ভে আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে তার স্ত্রীর নানা স্বপ্ন বুনতো। শিশুটিকে কীভাবে পরিচর্যা করবেন তা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা তাকে বলতেন। শুধু তাই নয়, ওই শিশুকে কোন স্কুলে পড়াবেন, তাকে অনেক বড় করে তুলবেন বলে জন্মের আগেই তার ভাবনার কথা বলতেন। তার ওই সব কথা শুনে তখন হাসতাম। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি জানান, জন্মের পর শিশুটির নামও রেখেছেন তার স্ত্রী। ‘ওয়াজিহা নূর’-নামটি আগেই তার ঠিক করা ছিল।
আল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে শিশুটিকে নিয়ে এত স্বপ্ন ছিল তার (সোমা)। সেই স্বপ্ন রেখে নিজেই হারিয়ে গেলেন।