দেশের তথ্য ডেস্ক:-
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে যেমন বাংলাদেশ অন্যতম; তেমনি বাংলাদেশের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে খুলনা অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ঝড়-বন্যার শিকার হয়ে খুলনা শহরে আশ্রয় নেয়ায় একদিকে যেমন বাস্তচ্যুত মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে তেমনি শহরের ওপরও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য উপকূলবাসীদের জন্য দুর্যোগ সহনশীল জীবনমান উন্নয়নে সরকারের সহযোগী হিসেবে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজ করতে হবে। দুর্যোগে যাতে ক্ষতির পরিমান কম হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে সকলকে। সেই সাথে জনগণকেও আরও সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে কেসিসি মেয়র বলেন, এর ফলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে বাসযোগ্য দেশ গড়া সম্ভব বলেও তিনি উলে¬খ করেন।
গতকাল বুধবার সকালে নগরীর সিএসএস আভা সেন্টারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ-জেজেএস আয়োজিত তৃতীয় বার্ষিক উপকূলীয় শিশু সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সিটি মেয়র এসব কথা বলেন।
দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেজেএস’র নির্বাহী পরিচালক এটিএম জাকির হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন শিশু প্রতিনিধি বৈশাখী সরকার ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নয়ন।
বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ, খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসাইন, খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আব্দুল¬াহ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’র হেড অব ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম সরজ দাস, ইন্টান্যাশনাল রিসার্চ কমিটির কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড সেক্রেটারিয়েটের হেড ড. মোঃ গোলাম রব্বানী, ওয়ার্ল্ডভিশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর চন্দন জেড গমেজ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’র জয়তিরাজ পাতরে, প্রোগ্রাম ম্যানেজার মশিউর রহমান, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট’র পরিচালক খন্দকার মাহবুব হাসান ও ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ফোরামের সদস্য সচিব গরহর নাঈম ওয়ারা।
সম্মেলনে পাঁচটি প্রযুক্তিগত সেশন পরিচালিত হয়। সেশনগুলো হচ্ছে, প্রশোশন অফ চাইল্ড পার্টিসিপেশন এন্ড চাইল্ড লিডারশিপ ইন ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড প্রটেকশন অফ চিলড্রেন উইথ ডিসেবেলিটি, ক্লাইমেট চেঞ্জ ইমপ্যাক্ট অন আরবানাইজেশন : খুলনা প্রেক্ষিত, ইউএনএফসিসি-লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড হাউ কোস্টাল পিপল অফ বাংলাদেশ উইল গেট বেনিফিট এবং প¬াস্টিক পলিশন এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ।
এসব সেশনে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, সঞ্চালনা এবং প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুবি’র ড. আশিক উর রহমান, ড. তুহিন রায়, এ্যাওসেড’র শামীম আরেফীন, ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ কমিটির সুবর্না বার্মা, ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট মাসুম তালুকদার, ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান, শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম, মোঃ কামরুজ্জামান, খুবি’র প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম, সমাজসেবার সহকারী পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম, জেজেএস’র এম এম চিশতি, সমাজসেবার উপ-পরিচালক খান মোতাহার হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা হাসনা হেনা, কেসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ স্বপন হালদার, ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ কমিটির সাবিরা সুলতানা নুপুর, ব্রাকের ড. মোঃ গোলাম রব্বানী, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম, পরিবর্তন খুলনা’র নির্বাহী পরিচালক এম নাজমুল আযম ডেভিড, একশন এইড’র মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, ইনেশিয়েটিভ ফর রাইটস ভিউ’র কাজী জাভেদ খালেদ পাশা, কুয়েটের তুষার রায়, খুবি’র প্রফেসর ড. জাকির হোসেন, কুয়েটের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মোঃ রিয়াদ হোসেন, জাবি’র প্রফেসর ড. আদিল মাহমুদ খান, সিনিয়র সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, রূপান্তরের স্বপন গুহ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এমরানুল হক, কুয়েটের প্রফেসর ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম, খুবি’র রাবেয়া সুলতানা, মোঃ আশিকুর রহমান, বেলা’র মাহফুজুর রহমান মুকুল, কেসিসি’র মোঃ আনিসুর রহমান, রেজবিনা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ এমদাদুল হক ও জিআইজেড’র মোঃ আতিয়ার রহমান প্রমুখ।
সম্মেলনে ১০ জন শিশুকে পুরস্কার দেয়া হয়। দুর্যোগকালীন সময়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী এসব শিশুদের পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুরা হলেন, সুবর্ণা, সানজিদা আক্তার, লিও হিরা, রোজী, আইমান আশিক হৃদয়, তায়েবা ইসলাম, শামসুন্নাহার মারিয়া, আফিয়া, সবুজ শেখ ও ফারহানা খান আমেনা।
সম্মেলনে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মাসুম তালুকদার, ইশরাত জাহান লিমা, আকাশ মজুমদার, দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহান মীম ও রমিনা আক্তার রূপা প্রমুখ।
সম্মেলনে ১০ দফা খুলনা ঘোষণা দেয়া হয়। এসবের মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে, দুর্যোগের সময় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখা, উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, সাইক্লোন শেল্টারে শিশু ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন/প্রতিবন্ধীদের জন্য ওয়াশ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা, ত্রাণ বিতরণের সময় শিশুদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা, জলবায়ু আলোচনা ও পরিকল্পনায় শিশুদের মতামত গ্রহণ ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধ করা প্রভৃতি।
সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবিত এলাকা এবং শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় এবং সম্পর্কিত জলোচ্ছ¡াসের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলো আমাদের শিশুরা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে শিশুদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। জলবায়ু সম্মেলন- ২০২৩ এর লক্ষ্য হল উপকূলীয় শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক আলোচনায় অংশ গ্রহণ করার জন্য তাদের নেতৃত্বের ক্ষমতা বাড়ানো। সম্মেলনটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও এবং সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত। উপকূলীয় শিশু সমস্যা বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের অবহিত করার জন্য শিশুদের বিভিন্ন দাবিগুলি ভিন্ন ভিন্ন সেশনে আলোচনা করা হয়েছে। এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় থেকে জাতীয় স্তর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ এবং ধারাবাহিক উদ্যোগের প্রয়োজন। শিশুরাও প্রতি বছর এই সম্মেলনের ধারাবাহিকতা অংশগ্রহণ করে যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের দুর্বলতাগুলি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের নজরে আনা যায়।