দেশের তথ্য ডেস্ক:-
খুলনায় লঘু চাপের কারণে কখনো মুষলধারে আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাত থেকে টানা বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যায়। বুধবার সকালে অফিসগামী মানুষ আর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়ে চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া সাধারণ মানুষ আর খেটে খাওয়া মানুষের জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। নগরীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং কাঁচাবাজারগুলোতে চরম অবস্থা বিরাজ করে। টানা বর্ষণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় ক্ষতিগ্রস্ত।
আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী গত মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে খুলনায়। যে বৃষ্টি সারাদিন চলে। সারাদিনে সূর্যের কোনো মুখ দেখা যায়নি। আর এই বৃষ্টিপাতের জন্য জনজীবন অনেকটা থমকে দাঁড়িয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে শ্রমজীবী মানুষেরা। বিশেষ করে রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর বিপাকে পড়েছে এই বৃষ্টির জন্য। খুলনার আবহাওয়ার দাবি আরও দুই এক দিন এরকম বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
নগরীর নিম্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় সড়কের আশপাশের দোকানপাট ও বাড়িঘরও ডুবে গেছে। সড়কের কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু। পানি বন্দী এলাকার মানুষের ভোগান্তিও চরমে। এই অবস্থার সমাধান চাইছেন স্থানীয়রা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে নগরীর মুজগুন্নি মহাসড়কের পাশের বাসিন্দা ও ভারি এবং ক্ষুদ্র যানবাহনের যাত্রীরা।
জানা গেছে, বয়রা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে নতুন রাস্তা পর্যন্ত ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার সড়ক পুননির্মাণের কাজ করে মেসার্স মোজাহার ও সাঈদ এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই অংশে ড্রেন নির্মাণ করছে মেসার্স আশরাফ বিল্ডার্স।
নতুন সড়কের কিছু অংশে পিচ ঢালাই উঠে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের পাশে থাকা ড্রেনেজ লাইন দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি জমে গেছে।
বুধবার সকালে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অধিকাংশ রাস্তায় যান চলাচল বিঘœ হয়। কোমর-হাটু পানির কারণে সড়কে আটকা পড়ে দীর্ঘ সময় পার করতে হয়েছে অনেককে। পদ্মার এপারের একমাত্র বিশেষায়িত শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, নেভি অ্যাংকরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, বিজিবির খুলনা সেক্টর সদর দপ্তর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে আসা-যাওয়া মানুষদের সড়ক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রাস্তায় পানির স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় অনেকে মাছ ধরছেন। কয়েকটি জায়গা বিপজ্জনক হওয়ায় লাল পতাকা তোলা হয়েছে।
শামীম হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, মুজগুন্নী সড়কের শেষ হওয়া সংস্কার কাজের সুফল মেলেনি। আগেও যেমন ভোগান্তি ছিল এখনও তাই রয়েছে। পুননির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই ফুলে ফেঁপে উঠে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে সড়কটিতে।
মুজগুন্নী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, সড়ক ও ড্রেনের কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে ড্রেন চলে গেছে সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। ড্রেন পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা সময় বড় একটি খাল ছিল। অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চল লবণচরা, টুটপাড়া, হরিণটানা, নিরালা প্রান্তিক আবাসিক এলাকা, গলামারী, সবুজবাগ আবাসিক এলাকা, রায়েরমহল, বাস্তুহারা কলোনী, দেয়ানা, ফুলবাড়িগেট, কুয়েট ক্যাম্পাসের একাংশ পানিতে ডুবে যায়। তবে বড় ধরনের কোনো জলাবদ্ধতা না হলেও বিরামহীন বৃষ্টিতে স্বাভাবিক কর্মজীবন থেমে যায়।
বুধবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ক্রেতা কম। যে সব কাঁচাপণ্য বাজারে এসছে, তা ছিল আকাশ ছোঁয়া দাম। খুলনা নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারের একাধিক দোকানদার জানান, বৃষ্টির কারণে বাজারে মালামাল সরবরাহ কম হওয়ায় দাম একটু বেশি।