পূজার আগে নরম, পরে গরম কর্মসূচি বিএনপির

bnp-1.jpg

এবার গুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এ পর্যায়ে ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়া, ঢাকামুখী রোড মার্চ, গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ঘেরাও, অবরোধ এবং প্রয়োজনে হরতাল দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এই কর্মসূচিকে বিএনপি তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় হিসেবে দেখছে।

বিএনপিগত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর এমন প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

চলমান কর্মসূচির শেষ দিনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে দুর্গাপূজার উৎসব চলাকালে আন্দোলনের কর্মসূচি না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা জানান, দেশে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পদক্ষেপ, আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য—এই সব কিছুর ওপর নির্ভর করে যেকোনো সময় কর্মসূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

কর্মসূচি প্রণয়নের বৈঠকে অনেকটা সময়জুড়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং তাঁর বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

ওই আলোচনায় কমিটির একাধিক সদস্য জানান, তাঁরা জেনেছেন বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়াকে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ওই আলোচনায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনো কথা বলেননি। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এই শর্তের কথা নাকচ করে দেন। পরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তিনি কোনো শর্তে বিদেশে যাবেন না।

গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেয় বিএনপি।

কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, এবারের কর্মসূচিকে দুই ভাগে ভাগ করা হবে। আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি থাকবে। এ সময়ে ঢাকায় মহাসমাবেশ ছাড়াও কয়েকটি সমাবেশ, পদযাত্রা ও রোড মার্চে দলীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতেও কয়েকটি কর্মসূচি থাকবে।

২০ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজার জন্য পাঁচ দিন দলীয় কোনো কর্মসূচি থাকবে না। দুর্গাপূজার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ‘কঠোর কর্মসূচি’ শুরু হতে পারে।

দলের কর্মসূচি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগের পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ মাসেই রাজনৈতিক কার্যকলাপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে, যা সরকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা মাথায় রেখেই আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, বৈঠকে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পর আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখান থেকে সরকারকে পদত্যাগে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে দুর্গাপূজার পর ‘কঠোর কর্মসূচি’ দেওয়া হবে।

রাজধানীর পাশের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন ঢাকামুখী রোড মার্চ নিয়ে আলোচনা

আন্দোলনের পরিকল্পনার বিষয়ে দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে এ মাসের শেষ সপ্তাহে রাজধানীমুখী রোড মার্চ করার কথা আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ঢাকার আশপাশের একটি জেলা থেকে রোড মার্চ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসবে। সেখানে জনসভা হবে। এরপর সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ভবন, বিচারাঙ্গন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করা হতে পারে। তারপর প্রয়োজনে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে পারে দলটি। খুব বাধ্য না হলে হরতালের দিকে যাবে না বিএনপি। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

ছাত্র ও যুব কনভেনশন

বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে সমমনা ১৫ ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে গত শুক্রবার ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামের নতুন ছাত্রজোট আত্মপ্রকাশ করেছে। এই জোট আগামী ১০ অক্টোবরের পরে রাজধানীতে ছাত্র কনভেনশন করবে। ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বটতলায় এই কনভেনশন করার চিন্তা-ভাবনা করছে।

একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী যুবদলের নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর যুব সংগঠনের সমন্বয়ে যুব জোট গঠনের পর কনভেনশন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ অক্টোবরের পর রাজধানীতে পৃথক দুটি কনভেনশন হবে।

খালেদা জিয়াকে কী শর্ত দেওয়া হয়েছে?

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির বিনিময়ে সরকারের পক্ষ থেকে শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতা এ বিষয়ে আলোচনা তোলেন। তাঁরা বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ছাড়তে হবে, বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে—এমন সব শর্ত দেওয়ার কথা তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন। দেশের বাইরে একটি শক্তি এর সঙ্গে জড়িত আছে বলেও তাঁরা দাবি করেন।

বৈঠকে নেতারা বলেন, এ সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তা স্পষ্ট। তাই সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচির বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। বৈঠকে একজন নেতা বলেন, যেভাবে হোক খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দরকার। খালেদা জিয়া না বাঁচলে গণতন্ত্র ফেরানো কঠিন হবে।

তবে গতকাল দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এমন কোনো শর্তের কথা আপনারাও জানেন না, আমরাও জানি না। উনার পরিবারের পক্ষ থেকে তো বলা হয়েছে, কোনো শর্ত সাপেক্ষে তিনি দেশের বাইরে যাবেন না।

Share this post

PinIt
scroll to top