মোঃমিরাজুল শেখ,জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট :-
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার গণ মিলন ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) হয়রানি, হুমকি-ধামকি ও মামলা থেকে রেহাই পেতে তাপস বাড়ই নামের এক পুস্তক ব্যবসায়ী সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ৩টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে গণ মিলন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহা-পরিচালক, মাইক্রো রেগুলেটরী অথরিটির চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া অভিযোগপত্রে জানা গেছে, তাপস বাড়ই চাকুরী না হওয়ায় ১০-১২ বছরে আগে থেকে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে চিতলমারী সদর বাজারে বই ব্যবসা শুরু করেন। সকল এনজিওর সথে সুসম্পর্ক থাকলে তার ব্যতিক্রম গণ মিলন ফাউন্ডেশন। বর্তমানে গণ মিলন ফাউন্ডেশনের খারাপ আচারণ, মানষিক, নির্যাতন ও মামলার কারণে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এনজিওটির কাছ থেকে তিনি ২ লাখ টাকায় প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা সুদে গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে উক্ত টাকা কিস্তি আকারে ধার্য হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউনের সময় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেননি। তাছাড়া ওই সময়ে সরকারিভাবে লোন আদায় বন্ধ ছিল। তখনও গণমিলন ফাউন্ডেশন তাকে কিস্তি আদায়ের জন্য মানষিক নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি নিরুপায় হয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিটন আলীর কাছে লিখিত আবেদন করেন। কোভিড পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সথে তিনি গণ মিলনের পাওনা প্রায় সমুদয় টাকা পরিশোধ করেন। তার সঞ্চয় বাবদ পাওনা টাকা থাকায় তিনি ২০ হাজার ১০০ টাকা পরিশোধ করেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মিমাংসার কথা ছিল।
কিন্তু গণ মিলন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রনিজিত কুমার বিশ্বাস ও চিতলমারী অফিস প্রধান মোঃ শামছুল ইসলাম ওই ব্যবসায়ীর সাথে কোন আপোষ করেননি। বরং তার কাছ থেকে করোনা কালীন সময়ে বন্ধ থাকা কিস্তির সুদ বাবদ অতিরিক্ত ২৫ হাজার ২০০ টাকা বেশি গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে এনজিও কর্তৃপক্ষ ওই ব্যবসায়ীর কাছে বাড়তি সুদ বাবদ আরও ৭ হাজার ২০০ টাকা দাবি করেন। উক্ত টাকা দিতে তিনি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় এনজিও কর্মকর্তারা ঋণ গ্রহণ করার সময়ে তাপস বাড়ইয়ের জমা রাখা ফাঁকা চেকে নিজেদের ইচ্ছা মাফিক অংক বসিয়ে তার নামে মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি ও হয়রানি করছেন। মামলা, হুমকি-ধামকি ও হয়রানিতে তার গোটা পরিবার বির্পযস্থ হয়ে পড়েছে। ।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চিতলমারী বাজারের এক বিশিষ্ট ব্যক্তির ঋণের বিপরীতে বীমা রাখা হয়। ওই ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার ঋণ মওকুফ হয়নি। পরবর্তীতে তার স্ত্রী বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করলে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হলে প্রায় ৮ বছর পরে উক্ত ঋণের টাকা তার স্ত্রীকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। এছাড়া গণ মিলণ ফাউন্ডেশন ডিপিএস নামে গ্রাহকদের নিকট থেকে টাকা গ্রহণ করছে। যখন উক্ত ডিপিএস এর মেয়াদ শেষ হবে তার পূর্বে উক্ত গ্রহককে লোন নিতে বাধ্য করে। লোন না নিলে তার ডিপিএস টাকা লভ্যাংশ ছাড়া ফেরত নিতে বাধ্য করে। এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে যা গণমিল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে।
তাপস বাড়ই স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই গণ মিল ফাউন্ডেশনের পরিচালক রনজিৎ বিশ্বাস ও সমন্বয়কারী মোঃ সামছুল ইসলামদের হুমকি-ধামকি, মামলা ও হয়রানিতে আমরা গোটা পরিবার বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছি। এখন হয়রানি থেকে বাচঁতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি।’
গণ মিলন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রনজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘গ্রাহকরা কি অভিযোগ করেছে তা আমি জানিনা। মৃত গ্রাহকের স্ত্রীর সাথে অনেক আগে আমাদের আপোষ হয়েছে। তাপস মিথ্যা কথা বলছে। আপনারা বিস্তারিত জানতে আমার চিতলমারী অফিস প্রধান সামছুল ইসলামকে ফোন দেন।’
এ ব্যাপারে গণ মিলন ফাউন্ডেশনের চিতলমারী অফিস প্রধান মোঃ সামছুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আপনারা আমার কথা বিস্তারিত লেখেন না। করোনার সময় সুদের কোন মাপ ছিলনা। আমরা প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা করে সুদ নেই। তাপসের নামে টাকা আদায়ের জন্য মামলা করেছি। তার কাছে আমাদের ২০ হাজার ১০০ টাকা থাকলেও মামলা পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত ৭ হাজার ২০০ টাকা ধার্য করেছি।’