মশা মারতে হবে, না হলে মৃত্যু আরো বাড়বে

mosa.jpg

দেশের তথ্য ডেস্ক:- 

ডেঙ্গুতে প্রথমবার আক্রান্ত হলে তত বেশি সমস্যা হয় না। প্রথমবার অনেকের কোনো উপসর্গও থাকে না। কিন্তু দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কিংবা চতুর্থবার আক্রান্তে রোগীরা খারাপ অবস্থায় চলে যায়। গত বছর রোগীদের বেশির ভাগই প্রথমবার আক্রান্ত হয়েছিল।

তাই মৃত্যু কম ছিল। এ বছর দ্বিতীয়বার আক্রান্তের কারণে গত বছরের তুলনায় মৃত্যু বেশি হয়েছে। আগামী বছর তা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
ডেঙ্গুর যে চারটি ধরন বা স্ট্রেইন রয়েছে, তার সবই আক্রান্ত হওয়া ছাড়া রোগীরা ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে না।

যে স্ট্রেইনে একবার কেউ আক্রান্ত হবে, সেই স্ট্রেইনে তিনি সারা জীবনের জন্য প্রতিরোধী হয়ে উঠবেন। মানে ওই স্ট্রেইন আর তার ক্ষতি করতে পারবে না।
তবে অন্য স্ট্রেইনে আক্রান্ত হলে সে ক্ষেত্রে তার রোগ প্রতিরোধ অবস্থা কার্যকর হবে না। এতে করে নতুন স্ট্রেইনে আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ দিকে চলে যায়।

এবার রোগীদের ক্ষেত্রে এটিই হচ্ছে।
আগে ডেঙ্গু রোগীদের সাধারণ সিম্পটম ছিল, চার-পাঁচ দিন জ্বর থাকত; এরপর প্লাটিলেট কমে যেত। এরপর সুস্থ হয়ে উঠত রোগী। এবার তা হচ্ছে না। আক্রান্তের দু-তিন দিনের মধ্যেই রোগীরা শকে চলে যাচ্ছে।

প্লাটিলেট কমারও সুযোগ দিচ্ছে না।
তবে রোগী শকে যাওয়ার আগে কিছু ওয়ার্নিং সিম্পটম বা উপসর্গ দেখা দেয়। সিম্পটমগুলো হচ্ছে তীব্র পেটে ব্যথা, খেতে পারে না, বারবার বমি হওয়া, পাতলা পায়খানা, ছয় ঘণ্টার বেশি প্রস্রাব না হওয়া, শরীর খুব দুর্বল হয়ে যাওয়া—এসব লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি হতে হবে। এ সময় হাসপাতালে যেতে না পারলে রোগী প্রথম ধাপ মিস করে এবং শকে চলে যায়। আমাদের রোগীদের ক্ষেত্রে এই জায়গায় ভুল বেশি হচ্ছে।

আমরা সে জন্য সব চিকিৎসককে বলেছি, কোনো রোগীর ডেঙ্গু বুঝতে পারলে তাকে শুধু একটি প্রেসক্রিপশন দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে রোগীকে এসব লক্ষণ সম্পর্কে লিখে দিতে হবে। যাতে এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে যোগাযোগ করে অথবা কাছের কোনো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। এটি করা গেলে এবং রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া গেলে ৯৯.৯৯ শতাংশ রোগীকে শকে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে।

ডেথ রিভিউতে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যায় দেরিতে হাসপাতালে আসা। এ ছাড়া আরেকটি কারণ দেখা দিচ্ছে এক্সপানডেন্ট ডেঙ্গু সিনড্রোম, যাতে ডেঙ্গু থেকে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে, লিভার ফেল করছে অথবা ব্রেইন আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে।

বেশির ভাগ মৃত্যু হচ্ছে ডেঙ্গু শকে। তাই আমরা চিকিৎসকদের জানিয়েছি, প্রতিদিন যদি ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী আসে, তার মধ্যে ১০ জনের যদি ডেঙ্গু শকের কোনো লক্ষণ থাকে, তাদের গুরুত্ব দিয়ে গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যাগ্রেসিভলি ফ্লুইড দিতে হবে। তাহলে তাদের মৃত্যু ঠেকানো যাবে। এতে করে শকের রোগীদেরও মৃত্যু কমানো সম্ভব। ডেথ রিভিউ কমিটিকে আমরা বলেছি, শকে থাকা রোগীদের বেডের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখতে হবে।

ডেঙ্গু রোগীর জন্য হাইটেক কিছুর প্রয়োজন হয় না। তাদের ভর্তি করে পর্যবেক্ষণে রেখে স্যালাইন দিতে হয়। রোগীরা উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে। যদি সমস্যা বেশি হয় বিভাগীয় হাসপাতালে যাবে। কিন্তু সবাইকে গণহারে ঢাকায় রেপার করলে রোগীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।

আগামী বছরের পরিকল্পনা

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। তাই ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমাতে হলে আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে হবে। আর এ জন্য জরুরি মশা নিধন। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ডাব্লিউআরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা অধিদপ্তর থেকে জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা করছি। এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশনে সবাইকে একই জায়গায় এনে সারা দেশে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এডিস মশা নিধন করতে হবে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে। অন্যথায় এই খারাপ অবস্থা চলতেই থাকবে।

Share this post

PinIt
scroll to top