দেশের তথ্য ডেস্ক:-
রাজপথে ফের মুখোমুখি হচ্ছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি। জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লম্বা সফর শেষে দেশে ফিরবেন আগামী ৪ অক্টোবর। আর এই সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠছে। এই উত্তপ্ত অবস্থা শুধু সেপ্টেম্বরের বাকি কদিনই নয়, পুরো অক্টোবর মাসজুড়েই থাকতে পারে। গত সোমবার বিএনপির ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ দলীয় ফোরামে সভা করে ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি শেষ হবে ৩ অক্টোবর, আর আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি শেষ হবে ৪ অক্টোবর।
এরপর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে রাজপথে থাকা বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি নজরে রেখে আওয়ামী লীগও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে। সে কারণে তফসিলের আগের পুুরো সময়টাই উত্তাল থাকছে রাজপথ।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে টানা ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ঘোষণা দিয়ে গতকাল ঢাকা জেলার জিনজিরা, কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশও করে বিএনপি। একইদিন গতকাল দুপুর ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথসভা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এই যৌথসভা শেষে রাজধানীসহ সারা দেশে ১২ দিনের পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অবশ্য আওয়ামী লীগ বলছে তারা কোনো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে না। দল ও সময়ের প্রয়োজনেই তারা কর্মসূচি পালন করছে।
গতকাল ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি জানান, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটায় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ উত্তরায় এবং মহানগর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করবে। ২৬ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জে সমাবেশ পালিত হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে সমাবেশ করবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। একই দিনে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ঢাকার মিরপুরের কাফরুলে সমাবেশ করবে। ২৮ সেপ্টেম্বর দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মদিন ও একই দিন ঈদে মিলাদুন্নবীর দোয়া মাহফিল বাদ আসর। এ ছাড়া সারা দেশে একই কর্মসূচি। ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা। ৩০ সেপ্টেম্বর আড়াইটায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কৃষক লীগের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আগামী ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি-জামায়াতের অশুভ তৎপরতা রুখতে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, এটা তাদের ব্যাপার। আশা করছি বিএনপিসহ সবাই অংশ নেবে। কিন্তু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে তা মোকাবিলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিএনপির পাল্টা কি না এমন এক প্রশ্নে হানিফ বলেন, কোনো কাউন্টার কর্মসূচি নয়, নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের এই ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তারা কোনো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছেন না। এসব তাদের নিয়মিত কর্মসূচিরই অংশ। নির্বাচন পর্যন্ত তারাও মাঠে থাকবে।
কর্মসূচি বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোড মার্চ করবে বিএনপি। ওই দিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরে নয়াবাজার ও ঢাকা জেলা আমিন বাজারে সমাবেশ করবে, ঠিক একই দিন দুপুর আড়াইটায় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ উত্তরায় এবং মহানগর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করবে।
২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগীয় রোড মার্চ এবং ঢাকায় পেশাজীবী কনভেশন করবে বিএনপি, এদিন কেরানীগঞ্জে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ করবে বিএনপি, একইদিন টঙ্গীতে সমাবেশ করবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। একই দিনে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ঢাকার মিরপুরের কাফরুলে সমাবেশ করবে। ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশ করবে বিএনপি, এদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ।
পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন করবে বিএনপি, ৩০ সেপ্টেম্বর আড়াইটায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কৃষক লীগের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরে ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোড মার্চের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ। পরদিন ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোড মার্চ করবে বিএনপি, অন্যদিকে আগামী ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইতে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে মুখোমুখি অবস্থান করবে।