দেশের তথ্য ডেস্ক:-
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)’ দেশের দুই হাজার ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর অডিট পরিচালনা করে। অডিট চলাকালে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় এক হাজার ৯০০ প্রতিষ্ঠানেই চাঞ্চল্যকর অনিয়মের খোঁজ মেলে। অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নেয়া, প্রাপ্য স্কেলের অতিরিক্ত বেতন উত্তোলন ও তথ্য গোপন করে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনসহ সরকারের ৩০ কোটি টাকার আত্মসাতের তথ্য পান অডিট কর্মকর্তারা।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬৩৩ একরের বেশি জমি বেহাত হওয়ার তথ্য ওঠে আসে অডিটে। এখানেই শেষ নয়, জাল সনদে চাকরি করছেন এমন ৮৬ জনের তথ্য পাওয়া যায় ওই অডিটে। যা রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, অডিট হওয়া দুই হাজার ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক হাজার ৮৯১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে।
জানা যায়, সারা দেশের ৩৬ হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র দুই হাজার ১০০ প্রতিষ্ঠানের অডিট পর্যবেক্ষণ করে ডিআইএ। প্রতি বছর কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে অডিট পরিচালনা করেন তারা। সরেজমিন পরিদর্শন ও অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই অডিট হয়। এরপর সেখানে অসঙ্গতি বা দুর্নীতি পেলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন শিক্ষাপরিদর্শকরা। কম জনবল থাকায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই অডিট পরিচালনা সম্ভব হয় না বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক। তিনি বলেন, ‘আরো অধিক জনবল থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরো বেশি অডিট পরিচালনা করা যেত। এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিহীনতা দূর করা যেত।’
ডিআইএর প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিআই কর্তৃক এক হাজার ৮৯১টি সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্য জাল সনদ শনাক্ত হয়েছে মোট ৮৬টি এবং এর বিপরীতে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৫ টাকা মাত্র। জাল সনদ, অবৈধ নিয়োগ, প্রাপ্য স্কেলের অতিরিক্ত বেতন-ভাতা উত্তোলন, তথ্য গোপন করে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন ইত্যাদি কারণে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ মোট ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার ১৫৬ টাকা মাত্র। এসব আদায়যোগ্য অর্থ সরকারি কোষাগারে চালানের মাধ্যমে জমা দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ৬৩৩ দশমিক৩৯৩৬ একর জমি বেহাত হয়েছে। প্রতিবেদনে জমি দখলে নেয়ার সুপারিশসহ জমি বেহাত হওয়ার কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
১৮৯১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল, কলেজ, স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংখ্যা এক হাজার ৩৬৮টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় শাখার ৪০১টি, খুলনা বিভাগীয় শাখার ২৫৩টি, রাজশাহী বিভাগীয় শাখার ৪০৬টি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শাখার ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পাঠানো প্রতিবেদনসমূহে ৬৮টি জাল সনদ ও জাল সনদের বিপরীতে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৯ হাজার ২৩৮ টাকা। অবৈধ নিয়োগ, প্রাপ্যতার অতিরিক্ত উত্তোলন, প্রাপ্য স্কেলে বেতন গ্রহণ না করা, তথ্য গোপন করে বেতন উত্তোলন এবং জাল সনদসহ মোট আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ ২৯ কোটি ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৭ টাকা। এক হাজার ৩৬৮টি প্রতিষ্ঠানের মোট বেহাত হওয়া জমির পরিমাণ ৪২৮ দশমিক ৪৬০৫ একর। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষারপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫২৩টি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর তদন্তসহ মোট ৪১টি প্রতিবেদন এবং মাদ্রাসার মোট ৪৮২টি প্রতিবেদন। ৫২৩টি প্রতিষ্ঠানে বেহাত হওয়া জমির পরিমাণ ২০৪ দশমিক ৯৩৩১ একর।
এ ব্যাপারে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মো. অলিউল্লাহ আজমতগীর আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করি। আমরা শুধু সুপারিশ করতে পারি। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। সব প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন কেন করা হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বর্তমান জনবল ১৩০ জন। এর মধ্যে ১৩ জনের পদ খালি। এই সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়েও খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠান থেকে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি।