বেনাপোল কাস্টমস হাউজ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণ ৪ বছরেও হদিস মেলেনি।

377246220_285153787593389_4594621689652630765_n.jpg

মিলন হোসেন বেনাপোল।
সিসি ক্যামেরা আর প্রশাসনিক নিরাপত্তার মধ্যে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের লকার খুলে লুট করা ১৯ কেজি ৩১৮ গ্রাম স্বর্ণ ৪ বছরেও উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।স্বর্ন চুরির সময় বেনাপোল কাস্টম হাউজে কমিশনার ছিলেন মোঃ বেলাল হোসেন চৌধুরীর।
মামলার সবশেষ তদন্তকারী সিআইডি বলছেন, লকারের দায়িত্বে থাকা কাস্টমস কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও বহিরাগতদের দিয়ে লকার দেখভাল করায় এই চুরি সংগঠিত হয়েছে। আসামিরা চুরি করা স্বর্ণ বিক্রী করে ফেলায় তা উদ্ধার সম্ভব হয়নি। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৫ জন কাস্টমস কর্মকর্তাসহ ৭ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে অভিযুক্ত আসামিরা সবাই রয়েছে জামিনে। সচেতন মহল বলছেন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী প্রথম থেকে আন্তরিক হলে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে চুরি হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার করা কঠিন কাজ না। এমন ঘটনায় পরিকল্পনাকারীরা পার পেয়ে যাওয়ায় বেনাপোল কাস্টমসের পর ঢাকা বিমান বন্দরে আরও একটি স্বর্ণ চুরির ঘটনা অন্য অপরাধীদের সাহস যুগিয়েছে।

সিআইডির চার্জশিটের তথ্য মতে ২০১৯ সালের ৯ থেকে ১১ নভেম্বর টানা ৩ দিন বন্ধের সুযোগে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলার গোডাউনের তালা ভেঙ্গে চোরেরা ভেতরে যায়। পরে ভল্টের তালা ভেঙ্গে ১৯ কেজি ৩১৮ দশমিক তিন গ্রাম স্বর্ণ চুরি করে। যার মূল্য প্রায় ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এই ভল্টের চাবি ছিল তৎকালীন ভল্ট ইনচার্জ সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলের কাছে।
গোডাউনের অন্যান্য লকারে স্বর্ণ, ডলারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র থাকলেও সেগুলো চুরি হয়নি।
ভল্ট ভাঙার সময় কাস্টমস হাউসের সবগুলো সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ১২ নভেম্বর সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক বাদী হয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় অজ্ঞাতনামা চুরির মামলা করেন।
ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলকে তাৎক্ষণিক ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর মামলাটি অগ্রগতির জন্য তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।

দেড় বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৪ জুন ৫ কাস্টমস কর্মকর্তাসহ ৭ জনকে আটক দেখিয়ে চার্জশিট দেয় সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। এতে বলা হয় লুট করা স্বর্ণ আসামিরা বিক্রি করে ফেলায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছেন- খুলনা বটিয়াঘাটার জয়পুর গ্রামের রনজিৎ কুণ্ডুর ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ বিশ্বনাথ কুণ্ডু, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দীর বাঁধুলি খালপাড়া গ্রামের মৃত জালাল সরদারের ছেলে কাস্টমস হাউসের সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সরদার, বরিশাল আগৈলঝাড়ার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম মৃধা, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের অম্বিকাপুর গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ আর্শাদ হোসাইন, খুলনার তেরখাদার বারাসাত গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমান মল্লিকের ছেলে বেনাপোল কাস্টমসের এনজিও কর্মী আজিবার রহমান মল্লিক, বেনাপোলের ভবেরবের পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল শেখের ছেলে শাকিল শেখ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার চারুয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ।
বর্তমানে আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাইরে আছে।

বেনাপোলের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, এতগুলো স্বর্ণতো খেয়ে ফেলার জিনিস না। স্বর্ণ বা স্বর্ণ বিক্রির টাকা কোনোটাই উদ্ধার হলো না কেন? আসামিরা আটক হলেও সবাই জামিনে। আমাদের দেশের প্রশাসন এখন অনেক দক্ষ। তারা আন্তরিক হলে চুরি যাওয়া স্বর্ণ বা তার টাকা উদ্ধার কঠিন হবে না।
এদিকে স্বর্ণ মামলার প্রধান আসামি রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল জানান, তিনি তার পূর্ববর্তী কাস্টমসের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ফাইল কেবিনে থাকা সব স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা বুঝে পেয়েছিলেন। তবে তাকে ফাইল কেবিনের একটি মাত্র চাবি দেওয়া হয়েছিল। বাকি চাবিগুলো সে দেয়নি। এ চুরির সাথে আমি জড়িত না। যদি আরো ভালভাবে তদন্ত করা হয় তবে প্রকৃত অপরামি ধরা পড়বে ও স্বর্ণ উদ্ধার হবে।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী সোহাগ হোসেন জানান, কাস্টমস লকার থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় ৪ বছর পার হয়ে গেল। অথচ তথ্য প্রযুক্তির এই যূগে স্বর্ণ উদ্ধার না হওয়া আসলেই প্রসাশনের জন্য লজ্জাজনক।

শার্শা উপজেলা দূর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারি আক্তারুজ্জামান লিটু বলেন, সিআইডি পুলিশ আসামিদের আটক দেখিয়ে চার্জশিট প্রদানের পর দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে স্বর্ণ চুরি করে চক্রটি অনেকটা পার পেয়ে যাওয়ায় এবার ঢাকা বিমান বন্দরে স্বর্ণ চুরিতে অপরাধীদের সাহস যুগিয়েছে। যদি বেনাপোল কাস্টমস থেকে লুট হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার হতো তবে হয়তো আবারও নতুন করে সরকারের এ সম্পদ লুটের কথা শুনতে হতো না।

মামলার তদন্তকারী যশোর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ৭ জন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণ চুরির সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

Share this post

PinIt
scroll to top