দেশের তথ্য ডেস্ক:-
মধুতে আছে একাধিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত মধু খেলে বহু রোগ থেকে মুক্তি মেলে। এসব কারণে সুন্দরবনের মধু সারা দেশে বেশ কদর রয়েছে। তবে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর নামে খুলনা মহনগরীতে তৈরি হচ্ছে ভেজাল মধুর। ভেজাল মধু শনাক্তের সাধারণত কোনো উপায় না থাকায় ক্রেতাসাধারণ তা কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ভেজাল মধু তৈরির জন্য প্রথমে চিনি, ফিটকিরি, কেমিক্যাল গ্লূকোজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম চুলায় ফুটিয়ে নেয়। তারপর উক্ত মিশ্রন ঠান্ডা হলে তাতে সামান্য পরিমান মধু মেশানো হয় মধুর ফ্লেভার আনার জন্য এরপর উক্ত মিশ্রন বোতলজাত করে তার গায়ে ’অর্গানিক বিডি’র লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় সুন্দরবনের কথিত খাঁটি মধু। এই ভেজাল মধু তৈরির চক্রের মূলহোতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( কেএমপি) ডিবি পুলিশ। আটককৃতরা হচ্ছেন মোঃ আশরাফুল ইসলাম রিপন (৩৪) এবং শেখ শাহরিয়ার মাসুদ (৩৮)। গতকাল সোমবার দুপুর পৌনে ৩টায় নগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০৫ কেজি ভেজাল মধু ও ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। ভেজাল মধু তৈরি চক্রের সদস্যকে আটকের বিষয়ে নগরীর ডিবির প্রধান কার্যালয়ে প্রেসবিফ্রিং করেন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ( ডিবি) বিএম নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, ৬-৭ মাস আগে উক্ত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে এই ভেজাল মধু তৈরি করে খুলনাসহ সারা দেশে তাদের লোক দিয়ে সরবারহ করতো। গ্রেফতারকৃত রিপনের পিতা আব্দুর রশিদ ওরফে চিনি রশিদ এই ভেজাল মধু তৈরি করতো। ২০২২ সালে শ্যামনগরে ভেজাল বিরোধী অভিযানের সময় তার বাবা গ্রেফতার হয়েছিলো। রিপন তার বাবার কাছ থেকে এই ভেজাল মধু তৈরির হাতে-খড়ি নিয়েছেন বলে ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, এই ভেজাল মধু খেলে মানুষের কিডনিসহ নানা জটিল ্েরাগে আক্রান্ত হতে পারে। দীর্ঘদিন এই ভেজাল মধু খাওয়ার ফলে কিডনি বিকলসহ শরীরে নানা রোগ বাসা বাধতে পারে।
প্রেসবিফ্রিংয়ে উল্লেখ করা হয়, খুলনা মহানগর ডিবি পুলিশের একটি টিম আড়ংঘাটা থানাধীন সিটি বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়স্থ এলাকায় একটি কারখানায় নকল ও কথিত মধু (ভেজাল মধু) উৎপাদিত হচ্ছে মর্মে সংবাদ পায়। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুর পৌনে ৩টায় আড়ংঘাটা থানাধীন সিটি বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়স্থ বাইতুশ শরিফ জামে মসজিদের পূর্ব পাশে জনৈক অপু সাহেবের টিনসেড বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে কথিত মধু (ভেজাল মধু) এবং কথিত মধু (ভেজাল মধু) তৈরীর সরঞ্জাম জব্দ করে। জব্দ করার মধ্যে ১০৫ কেজি (কথিত ভেজাল মধু), ১টি হলুদ রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি ড্রামে রক্ষিত চিনির সিরা (১০ কেজি), দুই লিটারের পানির বোতলে রক্ষিত জ্বালানো মধু (যা রং হিসেবে মধু তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ২ কেজি), ফিটকিরি চূর্ণ (২০০ গ্রাম), চিনি (১২ কেজি), ১টি প্লাস্টিকের পানির জার যার গায়ে রং দিয়ে MD লেখা, ১টি নীল রংয়ের প্লাস্টিকের অর্ধেক ড্রাম (যা মধু রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়) টি এক বার্নার বিশিষ্ট গ্যাসের চুলা (যার গায়ে omera লেখা), ১টি BEXIMCO ব্রান্ডের গ্যাস সিলিন্ডার, ১টি MEGHNA ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র,) প্লাস্টিকের তৈরি নীল কর্কযুক্ত সাদা রংয়ের বোতল ১৪, কাঁচের তৈরি বোয়েম ১২ টি, সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি ছোট কৌটা ২৪টি, সাদা কর্কযুক্ত প্লাস্টিকের ছোট বোতল ৩৬টি, সবুজ রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি কর্ক (মধু ঢালার পাত্র) ১টি এবং কালো জিরা ফুলের মধু লেখা স্টিকার ৫টি। অভিযানকালে জানা যায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী: মোঃ আশরাফুল ইসলাম রিপন। তার পিতা আব্দুর রশিদ ওরফে চিনি রশিদ। সে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা এবং শেখ মুজিবর রহমানের পুত্র শেখ শাহরিয়ার মাসুদ মিলে নগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন তানিসা আবাসিক এলাকা লাইন, বিল পাবলা, এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভেজাল মধু উৎপাদন করে আসছিলেন। এই ভেজাল মধু তৈরির জন্য তারা প্রথমে চিনি, ফিটকিরি, কেমিক্যাল গ্লুূকোজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম চুলায় ফুটিয়ে নেয়। তারপর উক্ত মিশ্রন ঠান্ডা হলে তাতে সামান্য পরিমান মধু মেশানো হয় মধুর ফ্লেভার আনার জন্য। এরপর উক্ত মিশ্রন বোতলজাত করে তার গায়ে ’অর্গানিক বিডি’র লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় সুন্দরবনের খাঁটি মধু। গ্রেফতারকৃত মোঃ আশরাফুল ইসলাম রিপন এর বিরুদ্ধে ২টি মামলা এবং শেখ শাহরিয়ার মাসুদ এর বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আড়ংঘাটা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে আরএমও ডা: সুমন রায় (মেডিসিন) বলেন, “খাঁটি মধু অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক খাবার। পিত্ত থলির সংক্রমণ রোধ করতে, বাতের ব্যথায়, মুখের দুর্গন্ধ কাটাতে, এমনকি শরীরের বাড়তি ওজন কমাতেও মধু খুবই কার্যকরী উপাদান। শরীরের তাপ উৎপাদন ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে মধুর বিশেষগুণও রয়েছে। কিন্তু সেটা যদি ভেজাল মধু হয় তাহলে সেই মধু দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে মানুষের কিডনি বিকলসহ শরীরে নানা ধরের রোগ বাসা বাঁধতে পারে।